শনিবার, ২৮ মে, ২০১১

জোনাকী পোকার আলোর রহস্য

রচনা - কামরুল আলম



শহরে যারা থাকেন, তাদের কথা তো জানিনা- কিন্তু গ্রামাঞ্চলের দিকে যারা থাকেন বা কোন এক সময় থেকেছেন তাদের জোনাকী দেখার কথা। আমার যতদূর মন পড়ে, বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের দিকে সন্ধ্যায় গ্রামে জোনাকি উড়তে দেখেছি। টিমটিমে আলোর অপূর্ব শোভা দেখিয়ে তাদের এদিকওদিকে ঘুরে বেড়ানো রাতে প্রকৃতিতে অনন্য দৃশ্যের অবতারণা করে। খুব কাছ থেকে না দেখলে এদের এই আলো সবার কাছে একটা রহস্যই থেকে যায়।

যারা দেখেছেন তাদের মনে কি আদৌ প্রশ্ন জাগেনি যে- এই স্বয়ংপ্রভ নীলাভ-সবুজ দ্যুতির সত্যিকারের রহস্য কি? আসে কোত্থেকে এই আলো ?

আজ ভাবলাম, এই বিষয়ে একটা নিবন্ধ লিখব। তাই উইকিপিডিয়া আর গুগলে লাঙল নামিয়ে দিলাম।

খুব কাছ থেকে তোলা ছবিতে দেখলে বুঝতে পারবেন এই রহস্যের উৎপত্তি সম্পর্কে। দেখা যায় যে, এই পতঙ্গটির তলপেটের দিক থেকে এই আলোর উৎপত্তি। বাস্তবিকই তাই। জোনাকির বা Lampyris noctiluca এর তলপেটের শেষের দিকে আলাদা একটি উপাঙ্গ আছে, যেখান থেকে এই আলোর উৎপত্তি হয়। এই প্রত্যঙ্গ হতে লুসিফেরিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত হয় যা জোনাকির শ্বাসনালী দ্বারা গৃহীত অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়। এই জারণ বা অক্সিডেশনে লুসিফারেজ নামক জৈবঅনুঘটক বা এনজাইম সহায়তা করে। জারণ বিক্রিয়াটিতে যে পরিমাণ শক্তি বা আলো উৎপন্ন হয়, তার মাত্র ২% হল তাপ। তাই এই আলো এতটা স্নিগ্ধ মনে হয়। ঐ বিশেষ অঙ্গটির স্নায়ু দ্বারা এই আলোর স্থায়িত্ব নিয়ন্ত্রিত হয়।

এই আলো তারা ব্যবহার করে তাদের বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করতে। স্ত্রী প্রজাতির জোনাকিরা এই আলো দিয়ে পুরুষ জোনাকিকে আকর্ষণ করে, ডিম পাড়ে এবং মারা যায়। নিষেকের পর লার্ভা দশায় অনেকদিন অবস্থান করতে হয় তাদের। তবে এই আকর্ষণের ব্যাপারটা প্রজাতিভেদে ভিন্ন। যেমন, আমেরিকায় এক প্রকারের জোনাকি আছে, যাদের পুরুষ প্রজাতি পাঁচ সেকেন্ড অন্তর জ্বলে উঠে, আর এর প্রতিক্রিয়ায় মাটিতে অপেক্ষমান স্ত্রী জোনাকি দুই সেকেন্ড পর পর জ্বলে উঠে। এভাবে তারা মিলন সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদান করে।

**এই সম্পর্কে ইন্টারনেটে আপনি ছবি দেখতে চাইলে Google Image Search এ গিয়ে Lampyris noctiluca লিখে Search দিন।

তথ্যসূত্র:

* en.wikipedia.org
* How Things Work- Webpage

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

you can make a sound