শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩

রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা

রচনা - জাতীয় ই তথ্য কোষ



রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা 


 

তরকারির স্বাদ বাড়ানোর জন্য রসুন ব্যবহার করা হয়। তরকারিতে দেয়ার পাশাপাশি রসুনের আচারও তৈরি করা যায়, যা ভাত দিয়ে খেতে খুব সুস্বাদু লাগে। সামান্য পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি যে কোন নারী রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

  •  বাজার সম্ভাবনা 
  •  মূলধন 
  •  প্রশিক্ষণ  
  •  প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান  
  •  রসুনের আচার তৈরির নিয়ম 
  •  আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
  •  সচরাচর জিজ্ঞাসা
ছবি: রসুনের আচার
বাজার সম্ভাবনা 
উৎপাদন মৌসুমে রসুনের দাম কম থাকে, তখন রসুন কিনে আচার তৈরি করে বিক্রি করতে পারলে বেশ লাভবান হওয়া যায়। রসুন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এছাড়া স্বাদের কারণে রসুনকে সবাই বেশ পছন্দ করে। তাই রসুনের আচার তৈরি বেশ সম্ভাবনাময় একটি ব্যবসা হতে পারে।

মূলধন 
আনুমানিক ৮০০-১০০০ টাকা মূলধন নিয়ে রসুনের আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বড় আকারে এ ব্যবসা শুরু করতে যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তবে ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ 
স্থানীয় রান্না শেখানোর প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ   পরিমাণ  আনুমানিক মূল্য (টাকা)  প্রাপ্তিস্থান 
বড় কড়াই ১টি ৩৫০-৩৬০ তৈজসপত্রের দোকান
বাঁশের চালুনী ১টি ৩০-৩৫ বাঁশের পণ্য বিক্রির দোকান
কাঁচের বৈয়াম ৫টি ১১০-১২০ তৈজসপত্রের দোকান
                                মোট=৪৯০-৫১৫ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

  • কাঁচামাল 
উপকরণ    পরিমাণ  আনুমানিক মূল্য (টাকা)  প্রাপ্তিস্থান 
ক) রসুন ১ কেজি ১১৫-১২০ মুদি দোকান
খ) কভারিং সস
ভিনেগার ৫০০ গ্রাম ১৫-১৭ মুদি দোকান
লবণ ৫০ গ্রাম ২-৩ মুদি দোকান
রসুন ৫০ গ্রাম ৫-৬ মুদি দোকান
হলুদ ১০ গ্রাম ২-৩ মুদি দোকান
লাল মরিচ ২০ গ্রাম ৪-৫ মুদি দোকান
জায়ফল ০৫ গ্রাম ১-২ মুদি দোকান
সরিষা ১০ গ্রাম ২-৩ মুদি দোকান
চিনি ৫০ গ্রাম ৫-৬ মুদি দোকান
সরিষার তেল ১০০ মি.লি. ৭-৮ মুদি দোকান
গ) কভারিং তেল
সরিষার তেল ৫০ মি.লি. ৩-৪ মুদি দোকান
                                  মোট=১৬১-১৭৭টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।


1.JPG 2.JPG 3.JPG 4.JPG
ছবি:রসুন
ছবি তোলার স্থান:নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

ছবি: লবণ
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
ছবি: ভিনেগার
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
ছবি : সরিষার তেল
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 5.JPG 6.JPG  7.JPG  8.JPG 
 
ছবি: সরিষা
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 
ছবি: মরিচের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 
ছবি: হলুদের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
  ছবি : রসুনের কোষগুলো  ছাড়িয়ে নেয়া, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

রসুনের আচার তৈরির নিয়ম 
১ম ধাপ 
পরিস্কার পরিছন্ন রসুন সংগ্রহ করে কোষগুলো আলাদা করে ছাড়িয়ে নিতে হবে এবং পানিতে লবণ মিশিয়ে এ কোষগুলো ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
13.JPG 14.JPG 15.JPG 16.JPG
ছবি: মসলায় রসুনের কোষগুলো ঢালা, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। ছবি: জ্বাল দেয়ার সময় চিনি মেশানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। ছবি:জ্বাল দেয়ার সময় সাইট্টিক এসিড মেশানো ,ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। ছবি: তৈরিকৃত রসুনের আচার ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 9.JPG 10.JPG  11.JPG  12.JPG 
  ছবি: রসুন পানিতে ফুটানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।   ছবি: সব মসলার সাথে ভিনেগার মেশানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।   ছবি: গরম তেলে মসলা ঢেলে জ্বাল দেয়া, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।   ছবি: জ্বাল দেয়া মসলায় চিনি মেশানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

২য় ধাপ 
বাঁশের চালুনীর সাহায্যে রসুনের কোষের খোসাগুলো ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। এরপর নরম ও ঝাঁঝালো গন্ধ দূর করার জন্য রসুনগুলো ফুটন্ত পানিতে ৫ মিনিট ফুটাতে হবে এবং চালুনীতে ঢেলে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
৩য় ধাপ 
কভারিং সস তৈরির জন্য সব মসলা পাটায় বেটে নিতে হবে। তারপর ভিনেগারের সাথে মসলাগুলো মিশাতে হবে। ১০ গ্রাম পরিমাণ সরিষা, ১০০ মি.লি গরম তেলে ভেজে নিয়ে ভিনেগার মিশানো মসলাগুলো কড়াইয়ে ঢেলে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে। এবং চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে এর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ চিনি মিশাতে হবে।
৪র্থ ধাপ 
এবার রসুনের কোষগুলো এই মিশ্রণের মধ্যে ঢেলে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে এবং বাকী অর্ধেক চিনি, সাইট্রিক এসিড এবং লবণ মিশিয়ে আরো কিছুক্ষণ জ্বাল দিলে আচার তৈরি হয়ে যাবে। এবার আচার ঠান্ডা করে কাঁচের বৈয়ামে ভরে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
  • খরচ  
স্থায়ী যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ ৩-৪ টাকা
কাঁচামাল বাবদ খরচ ১৬১-১৭৭ টাকা
জ্বালানী বাবদ খরচ ২০-২৫ টাকা
                                           মোট=১৮৪-২০৬ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

17.JPG
ছবি: রসুনের আচার বোতলজাতকরণ, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

  • আয় 
মাঠকর্ম, চাটমোহর থেকে জানা যায়, ১ কেজি রসুনে ১.৫ কেজি আচার তৈরি করা সম্ভব।
১ কেজি আচার বিক্রি হয় ২০০-২২০ টাকা
১.৫ কেজি আচার বিক্রি হয় ৩০০-৩১০ টাকা
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

  • লাভ 
১.৫ কেজি আচারে আয় হয় ৩০০-৩১০ টাকা
১.৫ কেজি আচার তৈরিতে খরচ হয় ১৮৪-২০৬ টাকা
                                           লাভ =১১৬-১০৪ টাকা 
অর্থাৎ ১০৪-১১৬ টাকা লাভ করা সম্ভব। তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি লাভ হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

বছরের যে কোন মৌসুমে রসুনের আচার তৈরি করা যায়। কিছু দিন পর পর আচার তৈরি করে স্থানীয় দোকানে সরবরাহ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : রসুনের আচারের ব্যবসাতে কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন? 
উত্তর : আনুমানিক ৮০০-১০০০ টাকা মূলধন নিয়ে রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
প্রশ্ন ২ : রসুনের আচার তৈরির পর কোথায় বিক্রি করা যায় ? 
উত্তর : রসুনের আচার তৈরির পর সেগুলো পাইকারি বা  খুচরা দরে বেকারী দোকানগুলোতে বিক্রি করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৩ : রসুনের আচার তৈরির জন্য কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কি ? 
উত্তর : স্থানীয়ভাবে রান্না শেখানোর যে সকল প্রতিষ্ঠান থাকে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।





কৃতজ্ঞতা স্বীকার 
পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার শিরিনা খাতুনের নিকট থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে রসুনের আচার তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এছাড়া রসুনের আচার তৈরির ব্যবসা কনটেন্ট লেখার জন্য নিচের বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে।
  1. আজমী, সাহেদা; হোসেন, এনায়েত, আলী আহমেদ, রসুনের আচার তৈরি, সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, এগ্রো প্রসেসিং প্রোগ্রাম, আইটিডিজি-বাংলাদেশ।

পিঠা ঘর

রচনা -জাতীয় ই তথ্যকোষ
 পিঠা ঘর 
 

পিঠা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে। সাধারণত নতুন ধান উঠে বলে শীতকালে পিঠা বেশি তৈরি করা হয়। তবে এখন সারাবছরই নানা রকম পিঠা পাওয়া যায়। পিঠা পছন্দ করে না এরকম মানুষ আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া  কঠিন। তাই কর্মসংস্থানের জন্য নারী, পুরুষ যে কেউ পিঠা ঘর দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
8pitha ghor.jpg
ছবি: ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
বাজার সম্ভাবনা 
নানান রকম পিঠা তৈরি করে দোকানে রেখে পিঠা বিক্রি করা সম্ভব। পিঠা মুখরোচক খাবার বলে আমাদের দেশে সারাবছরই নানা রকম পিঠার চাহিদা থাকে। এছাড়া আজকাল বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠান যেমন-জন্মদিন, গায়ে হলুদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে পিঠার আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে অর্ডার অনুযায়ী পিঠা সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব।

স্থান নির্বাচন   
বাজারের কেন্দ্র স্থল বা যেখানে লোক সমাগম হয় সেই রকম জায়গায় পিঠা ঘর দিলে সেটা সবার নজরে আসবে এবং ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। আবার বাজারের কাছে বাড়ি হলে বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় দোকান ঘর তৈরি করে নেয়া যাবে। এছাড়া স্কুল-কলেজের সামনে পিঠা ঘর দিলে সেখানেও ভালো বিক্রি হবে।
দুই ভাবে পিঠা ঘর তৈরি করে পিঠা বিক্রি করা যায়।
১. স্থায়ী দোকান
২. ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর

  • স্থায়ী দোকান  
স্থায়ী দোকান দেবার জন্য দোকান ঘর প্রয়োজন হবে। বাজারে, স্কুল-কলেজের সামনে বা আবাসিক এলাকায় পিঠা ঘর তৈরি করে বিক্রি করা যাবে। পিঠা ঘরের আয়তনের উপর নির্ভর করে কতগুলো চেয়ার টেবিল লাগবে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুন্দর ও পরিপাটিভাবে দোকান ঘর সাজাতে হবে। দোকান ছোট হলে বেশি চেয়ার টেবিল না রাখাই ভালো। টেবিলের উপর পরিস্কার পানির গ্লাস ও পানির জগ রাখতে হবে। পিঠা রাখার জন্য স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা একটা শেলফ কিনে বা তৈরি করে নিলে প্রতি তাকে ট্রের উপর বিভিন্ন রকম পিঠা সাজিয়ে রাখা যাবে। তাহলে ক্রেতারা সহজেই বুঝতে পারবে কি কি পিঠা আছে। পিঠা পরিবেশনের জন্য পরিস্কার প্লেট-গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। স্থায়ী দোকান একটি নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠে। সাধারণত সকাল বেলা এসব দোকান খোলা হয় এবং রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। পুঁজি অল্প হলে চেয়ার টেবিলের পরিবর্তে বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়া ক্রেতারা যাতে পিঠা কিনে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য পিঠা সরবরাহের জন্য কাগজের ঠোঙ্গা বা প্যাকেটের ব্যবস্থা রাখলে ভালো হবে। পিঠার দোকানে চায়ের ব্যবস্থা রাখলে পিঠার সাথে সাথে চাও বিক্রি করা সম্ভব হবে।


  • ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর 
অল্প পুঁজি হলে স্থায়ী দোকানের পরিবর্তে ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর দেওয়াও সম্ভব। এক্ষেত্রে একটা ভ্যান এর উপর পিঠা ঘর সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব। পিঠা রাখার জন্য ভ্যান এর উপর একটা অংশ আলাদা কাঁচে ঘিরে নিলে পিঠাতে ধূলাবালি পড়বে না। এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের গ্লাস ও প্লেট ব্যবহার করা সুবিধাজনক। এ ব্যবস্থা শহরের জন্য বেশি প্রযোজ্য। শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, খেলার মাঠ, মেলা, শিশুপার্ক ও অন্যান্য পার্কে ঘুরে ঘুরে পিঠা বিক্রি করে ভালো ব্যবসা করা সম্ভব।

মূলধন 
পিঠা ঘর দেবার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে আনুমানিক ৯০০ থেকে ১০৭০ টাকার প্রয়োজন হবে। দোকান ভাড়া নিতে হলে দোকান ঘরের ভাড়া ও পজিশন বাবদ বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতিদিন পিঠা তৈরির কাঁচামাল কেনার জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা))-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ 
অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে ব্যবসার বিস্তারিত জেনে নিলে ব্যবসা শুরু করা সহজ হবে। বিভিন্ন এলাকার পিঠা তৈরি করা শিখে নিয়ে সে সব পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া বাজারে বিভিন্ন পিঠা তৈরির বই পাওয়া যায়। সেই সব বই পড়ে নতুন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ  পরিমাণ  আনুমানিক মূল্য (টাকা)  প্রাপ্তিস্থান 
চুলা ২টি ২০০-২২০ হার্ডওয়ারের দোকান
মাটির হাঁড়ি পাতিল ২টি ১০০-১২০ মাটির জিনিসপত্রের দোকান
কড়াই ১টি ১০০-১২০ তৈজসপত্রের দোকান
ছাঁচ ৩/৪টি ৮০-১০০ তৈজসপত্রের দোকান
ঢাকনা ২টি ৮০-৯০ তৈজসপত্রের দোকান
খুন্তি ২টি ৬০-৭০ তৈজসপত্রের দোকান
প্লেট (প্লাস্টিকের) ১২টি ১২০-১৫০ তৈজসপত্রের দোকান
গ্লাস ১২টি ১২০-১৫০ তৈজসপত্রের দোকান
চামচ ২টি ৪০-৫০ তৈজসপত্রের দোকান
                                  মোট=৯০০-১০৭০ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯



1pitha ghor.jpg 5pitha ghor.jpg 6pitha ghor.jpg 7pitha ghor.jpg
ছবি: চালের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।

ছবি: পানিতে মেশানো চালের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: কড়াইতে মিশ্রণ ঢালা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: পিঠা ভাজা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
পিঠা তৈরির নিয়ম  
১। বেশির ভাগ পিঠাই চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চালের গুঁড়া ঝরঝরে ও মসৃণ হয়। গুঁড়া ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
২। বাজার থেকে ভালো মানের টাটকা গুঁড়, ময়দা ও চিনি কিনে আনতে হবে।
৩। পিঠা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে সব পিঠাই যেন মোটামুটি একই মাপের হয়। চিতই পিঠা তৈরির জন্য বাজারে মাটির খোলা বা পাত্র কিনতে পাওয়া যায়। সেটা কিনে নিলে পিঠা তৈরি করতে সুবিধা হবে। সব পিঠা একই মাপের হবে।
৪। ভাঁপা পিঠা তৈরির জন্য সুন্দর মাপের একটা বাটি নিলে পিঠাগুলো দেখতে সুন্দর হয়।
৫। বাজারে পিঠা তৈরির জন্য নানান নকশার ছাঁচ কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে নিলে নতুন নতুন নকশার পিঠা তৈরি করা যাবে।
৬। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন পিঠা তৈরির নিয়ম শিখে নিয়ে সেসব পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া পিঠা তৈরির বই পড়েও নতুন পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া নিজে নতুন নতুন ধরণ ও স্বাদের পিঠা তৈরি করলে তা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।


2pitha ghor.jpg 3pitha ghor.jpg 4pitha ghor.jpg
ছবি: চালের গুঁড়ায় গুঁড় মেশানো
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: ভাঁপে দেয়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: ভাপা পিঠা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।

পিঠা ঘর পরিচালনার নিয়মকানুন 
যে কোন ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে-
১. ভালো জিনিস রাখা: ক্রেতাদের কাছে কখনও খারাপ জিনিস বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ কেউই টাকা দিয়ে খারাপ জিনিস কিনতে চায় না। তাই দোকানে ভালো জিনিস রাখতে হবে।

২. সুন্দর ব্যবহার: ক্রেতার সাথে ভালো ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো ব্যবহার পেলে ক্রেতার দোকানে আসবে। সম্ভব হলে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হবে। যেমন কেউ বেশি গুঁড় বা ঝাল চাইলে সম্ভব হলে তা দিতে হবে।

৩. পরিস্কার পরিচ্ছনতা: পিঠার দোকান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে দোকানের আশপাশ যেন স্যাঁত স্যাঁতে না হয়। চেয়ার, টেবিল, গ্লাস, প্লেট, চামচ পরিস্কার রাখতে হবে। দোকানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা উচিত। একজনের ব্যবহারের পর প্লেট, গ্লাস পরিস্কার পানি ও সাবান গুঁড়া দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে।

৪. জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করা: দোকানে যেসব জিনিসপত্র আছে তার একটা তালিকা রাখলে ভালো। তালিকা থাকলে সপ্তাহের শেষে কেনাকাটা করতে সুবিধা হয়। তাছাড়া দোকানের জিনিসপত্রের হিসাব রাখাও সহজ হয়।

৫. চাহিদা বুঝে মালামাল রাখা: যে সব পিঠা বেশি বিক্রি হয় যেসব পিঠা তৈরির উপকরণ বেশি রাখতে হবে এবং সেই সব পিঠা বেশি তৈরি করতে হবে।

সাবধানতা 
  1. দোকান বা বিক্রি করার স্থানের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  2. প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি পরিস্কার রাখতে হবে।
  3. বিশুদ্ধ খাবার পানি রাখতে হবে।

আয় ও লাভের হিসাব 
পিঠা তৈরির পর তা সুন্দরভাবে পরিবেশন করতে হবে।
প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার পিঠা তৈরি করে ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে।
  • মোট খরচ 
খরচের ক্ষেত্র  আনুমানিক খরচ (টাকা) 
পিঠা তৈরির কাঁচামাল কিনতে খরচ ৫০০-৬০০ টাকা
স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ ১০-১৫ টাকা
                      পিঠা তৈরিতে মোট খরচ  ৫১০-৬১৫ টাকা
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  • আয় ও লাভের পরিমাণ 
পিঠা বিক্রি করা যাবে  ৭০০-৮৫০ টাকা 
পিঠা তৈরি করতে খরচ ৫১০-৬১৫ টাকা
          প্রতিদিন মোট লাভ  ১৯০-২৩৫ টাকা
এছাড়া বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর আয় ও লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠানামা করে। তাই এ ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 

পিঠা ঘর স্থাপনের জন্য অল্প জায়গা ও খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। তাই আগ্রহী নারী-পুরুষ যে কেউ পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : কিভাবে পিঠা তৈরি করে ব্যবসা করা যায় ? 
উত্তর : স্থায়ী দোকান দিয়ে বা ভ্রাম্যমানভাবে পিঠা ঘর দিয়ে পিঠা বিক্রি করা সম্ভব।
প্রশ্ন ২ : পিঠা ঘর দেবার জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে কি করতে হবে ? 
উত্তর : যদি ঋণের প্রয়োজন হয় তাহলে ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন

রচনা -জাতীয় ই তথ্যকোষ

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন 

রফিক ও শাহানা মুসলিম ধর্মমতে বিয়ে করে। তাঁদের ৫ বছরের একটি মেয়ে আছে। বিয়ের ৪ বছর পর শাহানার সম্মতি না নিয়েই রফিক আরেকটি বিয়ে করে এবং সে শাহানাকে দেনমোহর, ভরণ-পোষণ কিছুই দেয় না। যেহেতু তাঁদের বিয়েটা রেজিস্ট্রি করা হয় নি তাই শাহানা মামলা করার কথা বললে রফিক বিয়েটা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এবং তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। শাহানা বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। তবে শাহানা ও রফিকের বিয়ের কাজী শাহানাদের পারিবারিকভাবে পরিচিত ছিল। এছাড়া তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা তাদের বিয়ে সম্পর্কে জানতেন। বিয়ে প্রমাণ করার জন্য শাহানা তার বাবার সাথে একজন উকিলের কাছে যায় পরামর্শের জন্য।

উকিল : আপনার বিয়ে কি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ?
শাহানা : ‘বিবাহ রেজিস্ট্রেশন কি?’ এটাইতো বুঝি না। এমন কিছু হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
2.jpg
উকিল : রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে তালিকাভূক্তি। আইনের দ্বারা নির্ধারিত তথ্যাবলী দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে সরকারিভাবে বিবাহ তালিকাভূক্তি করাই হচ্ছে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন। ব্যাখ্যা: ১
শাহানা : মুসলিম আইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
উকিল : আপনার বিয়ে কি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ?                                                      ছবির স্বত্ব বারসিক
শাহানা : ‘বিবাহ রেজিস্ট্রেশন কি?’ এটাইতো বুঝি না। এমন কিছু হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
উকিল : রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে তালিকাভূক্তি। আইনের দ্বারা নির্ধারিত তথ্যাবলী দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে সরকারিভাবে বিবাহ তালিকাভূক্তি করাই হচ্ছে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন। ব্যাখ্যা: ১
শাহানা : মুসলিম আইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
উকিল : মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা কঠিন। রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে মেয়েরা প্রতারিত হতে পারে। সকল বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা একটি আইনগত দলিল। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ব্যাখ্যা: ২ 
উকিল : আপনার বিয়ের সময়ের কি কোন ছবি আছে বা বিয়ে প্রমাণ করার মত কোন তথ্য কি আপনার কাছে আছে ?
শাহানা : হ্যাঁ, আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের কিছু ছবি আছে। এছাড়া যে কাজী আমার বিয়ে পড়িয়েছেন তিনি পারিবারিকভাবে আমাদের  পরিচিত।
উকিল : ছবি দিয়ে বিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু আপনার বিয়ে রেজিস্ট্রি করা উচিত ছিল। তাহলে এত সমস্যা হত না। 
শাহানা : হিন্দু ধর্মের আইনে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
উকিল : হিন্দু পারিবারিক আইন অনুযায়ী হিন্দু বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কোন বিধান নাই। যেহেতু বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা হিন্দু পারিবারিক আইন মতে পরিচালিত হয় ফলে বৌদ্ধদের বিয়েও রেজিস্ট্রেশন করা হয় না। তবে প্রয়োজনে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করা যায়।
1.jpg
শাহানা : খ্রিস্টান ধর্মের আইনে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
উকিল : খ্রিস্টান ধর্মের আইন অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ব্যাখ্যা:3   
শাহানা : বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করা কেন প্রয়োজন ?
উকিল : বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব পারিবারিক জীবনে অপরিসীম। রেজিস্ট্রেশন বিয়ের বর-কনে উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নারীদের জন্য। বিবাহ সম্পর্কিত কোন জটিলতা বা প্রমাণের প্রশ্ন উঠলে এই রেজিস্ট্রেশনই প্রমাণ পত্র হিসেবে কাজ করে।
শাহানা : রেজিস্ট্রেশন করলে নারীরা কি সুবিধা পায় ?
উকিল : রেজিস্ট্রেশন হলে অনেকাংশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ হয়, কারণ কাবিননামায় প্রমাণ পত্রসহ বয়স উল্লেখ করতে হয় । এছাড়া নারীর সুরক্ষায় বিয়ের নিকাহনামা বা কাবিননামা একটি সত্যতা প্রমাণের দলিল। কাবিননামা হলো মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে একটি চুক্তিপত্র বা দলিল। খ্রিস্টান বিয়ের ক্ষেত্রেও একই রকম। কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দু বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার কারণে অনেক হিন্দু নারী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। 
শাহানা : কখন এবং কিভাবে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করা যায় ?
উকিল : মুসলিম বিয়েতে সবচেয়ে ভাল হয়¾বিয়ের দিনই বিয়েটি রেজিস্ট্রি করানো। বিয়ের অনুষ্ঠানে সকলের উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রেশন করলে তার সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়।
শাহানা : বিয়ের দিন রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব না হলে কখন রেজিস্ট্রেশন করা যায় ?
উকিল : নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিজে বিয়ে পড়ালে বিয়ের দিনই তিনি বিয়েটি রেজিস্ট্রি করবেন। যদি কাজী নিজে বিয়ে না পড়ান বা কোন কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে নিকটস্থ কাজী অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি করাতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেক ক্ষেত্রে কাজী নিজে বিয়ে রেজিস্ট্রি না করে তার সহকারির মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করান। সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া ঠিকমত হয়েছে কিনা তা ভালভাবে দেখে নেয়া প্রয়োজন। ব্যাখ্যা:4    
শাহানা : বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় কাজীকে কোন কোন বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয় ?
উকিল : বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় বিয়ের কাজীর কতকগুলি বিষয় সাবধানতার সাথে খেয়াল রাখতে হয়।  বিষয়গুলো হলো:
  • বরের বয়স কমপক্ষে ২১ এবং কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ হয়েছে কিনা
  • বর ও কনের বিয়েতে পূর্ণ সম্মতি আছে কিনা
  • বিয়ের প্রকৃত সাক্ষী
  • আশু ও বিলম্বিত দেনমোহর

বিয়েতে উল্লেখিত শর্তসমূহ পূরণ হলেই কেবলমাত্র কাজী (নিকাহ রেজিষ্টার) বিয়ে রেজিস্ট্রি করবেন। তবে তিনি কাবিন নামার ১৮ নং ঘরে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের (তালাক-ই- তৌফিজের) ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কি না সেই বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে খেয়াল করবেন।
শাহানা : খ্রিস্টান বিয়ে কে রেজিস্ট্রেশন করান ?
উকিল : খ্রিস্টান বিয়ের ক্ষেত্রে যিনি বিয়ে সম্পাদন করবেন তিনিই বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন। ব্যাখ্যা: 5     
শাহানা : বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে কত টাকার প্রয়োজন হয় ?
উকিল : মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে একজন বিয়ে রেজিস্ট্রার দেনমোহরের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে একটি বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের ফি নির্ধারণ করে থাকেন। ধার্য্যকৃত দেনমোহরের প্রতি হাজার বা তার অংশবিশেষের জন্য ১০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি এর পরিমান ১০০ টাকার কম হবে না এবং ৪০০০ টাকার উপরে হবে না। যেমনঃ কারো বিয়ের দেনমোহর ১০,০০০ টাকা হলে ফি হবে ১০০ টাকা, ১০,৫০১ টাকা হলে ১১০ টাকা (প্রতি হাজারের অংশবিশেষের জন্যও ১০ টাকা), ১১,০০০ টাকা হলেও ১১০ টাকা, দেনমোহরের পরিমান ৫০০,০০০ টাকা হলেও ৪০০০ টাকা (সর্বোচ্চ পরিমান ৪০০০ টাকা) আবার দেনমোহর ১০০০ টাকা হলেও ফি দিতে হবে ১০০ টাকা (যেহেতু সর্বনিম্ন পরিমান ১০০ টাকা)।
উল্লেখ্য রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধের দায়িত্ব বরপক্ষের। সরকার সময়ে সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ফি পরিবর্তন ও ধার্য্য করে থাকে।  
শাহানা : বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি কারা প্রদান করেন ?
উকিল : বিয়েতে বরপক্ষ রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করবেন। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলে নিকাহ রেজিষ্টার একটি প্রাপ্তি রশিদ প্রদান করবেন। এখানে উল্লেখ্য মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের পর নিকাহ রেজিষ্টার বাধ্যতামূলকভাবে বর ও কনেপক্ষকে বিয়ের কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রদান করবেন। খ্রিস্টান বিয়ের সত্যায়িত কপির জন্য যথাযথ ফি দিয়ে সত্যায়িত কপি নিতে হবে।
শাহানা : বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের সুফল কি কি ?
উকিল : একটি বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করলে তার অনেক সুফল পাওয়া যায়। সুফলগুলো হলো:
ক) বিয়ের পক্ষদ্বয় বিয়ে অস্বীকার করতে পারেনা এবং পরস্পর পরস্পরের প্রতি কিছু দায়-দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়।
খ) স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে বা স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ে করলে বা করার উদ্যোগ নিলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
গ) স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় করতে পারেন।
ঘ) স্বামী/স্ত্রী উভয়ে উভয়ের সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার হতে পারেন।
ঙ) বিয়ের সময় দেনমোহর ধার্য্য না হলেও স্ত্রী ন্যায্য দেনমোহর আদায় করতে পারেন।
শাহানা : বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করা কুফল কি কি ?
উকিল : রেজিস্ট্রেশন না করলে কুফল হিসেবে উপরে উল্লেখিত বিষয়ে স্বামী অথবা স্ত্রী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ বা দাবী আদায় করতে পারেন না। বিশেষ করে বিয়ের মিথ্যা কথা বলে নারীদের পাচার, শ্লীলতাহানী ইত্যাদিরূপে ব্যবহার করতে পারে কিন্তু বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হলে  এই ধরণের নারী নির্যাতন  বন্ধ হবে বা অনেক কমে যাবে।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিয়ের দিনই রেজিস্ট্রেশন করা যুক্তিযুক্ত। যেহেতু বিয়ের লিখিত প্রমাণ হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন তাই বিয়ে সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্নে, যে কোন সমস্যায় এর প্রয়োজন হয়। যেহেতু শাহানার বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল না তাই শাহানার সাক্ষী, কাজী ও বিয়ের সময় তোলা ছবি দিয়ে উকিল আদালতে রফিকের সাথে তার বিয়ের প্রমাণ করতে পারে। কিন্তু যদি তার বিয়ে রেজিস্ট্রি করা থাকতো তাহলে তাকে এসব কিছুই প্রমাণ করতে হতো না। বিনা অনুমতিতে বিয়ে করার জন্য রফিক আইন অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করছে। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং এ ধরণের অপরাধ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন.১. রেজিস্ট্রেশন না করা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ? শাস্তির পরিমাণ কি? 
উত্তর. মুসলিম আইনে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রেজিস্ট্রেশন না করলে ২ বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে তবে বিয়েটি বাতিল হবে না। খ্রিস্টান আইনে রেজিস্ট্রেশন বিয়ের অন্যতম অংশ ফলে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। এছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম এখনো চালু হয় নি।।
প্রশ্ন.২, যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে রেজিস্ট্রি না হয় তাহলে কতদিনের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হবে? 
উত্তর.বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা উত্তম তবে কোন কারণে তা  না হলে ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
প্রশ্ন.৩.বিয়ের দেনমোহর এর পরিমাণের  উপর কি রেজিস্ট্রেশন ফি ধার্য্য হয়? 
উত্তর. হ্যাঁ, বিয়ের দেনমোহরের পরিমাণের উপর রেজিস্ট্রেশন ফি ধার্য্য হয়। ধার্য্যকৃত দেনমোহরের প্রতি হাজার বা তার অংশবিশেষের জন্য ১০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি এর পরিমান ১০০ টাকার কম হবে না এবং ৪০০০ টাকার উপরে হবে না। যেমনঃ কারো বিয়ের দেনমোহর ১০,০০০ টাকা হলে ফি হবে ১০০ টাকা, ১০,৫০১ টাকা হলে ১১০ টাকা (প্রতি হাজারের অংশবিশেষের জন্যও ১০ টাকা), ১১,০০০ টাকা হলেও ১১০ টাকা, দেনমোহরের পরিমান ৫০০,০০০ টাকা হলেও ৪০০০ টাকা (সর্বোচ্চ পরিমান ৪০০০ টাকা) আবার দেনমোহর ১০০০ টাকা হলেও ফি দিতে হবে ১০০ টাকা (যেহেতু সর্বনিম্ন পরিমান ১০০ টাকা)।
উল্লেখ্য রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধের দায়িত্ব বরপক্ষের। সরকার সময়ে সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ফি পরিবর্তন ও ধার্য্য করে থাকে।  
প্রশ্ন. ৪.বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় নিকাহ রেজিষ্টারের দায়িত্ব কি? 
উত্তর. বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় বিয়ের অবশ্য পালনীয় শর্ত পূরণ হয়েছে কিনা তা নিকাহ রেজিষ্টার যাচাই-বাছাই করে দেখবেন যেমন: ১. বিয়েতে বর-কনের বয়স যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছর হয়েছে কিনা (দালিলিক প্রমাণসহ), ২. উভয়ের সম্মতি আছে কিনা, ৩.দেনমোহর ধার্য্য হয়েছে কিনা, ৪. কারো কোন অধিকার খর্ব হয়েছে কিনা ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র 
  1. বাংলাদেশ বিবাহ রেজিস্ট্রেশন, ১৯৯৮, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক, ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর সহায়তায় প্রকাশিত।
  2. পারিবারিক আইনে বাংলাদেশের নারী, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, প্রথম প্রকাশ: জুন-১৯৯৭।
  3. মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪।
  4. http://www.minlaw.gov.bd/mregistration.htm  (১৪ মে ২০১০ তারিখে পর্যবেক্ষণকৃত)

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন : ব্যাখ্যা
ব্যাখ্যা:১ ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ সরকার নির্ধারিত কাজী দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক।
খ্রিস্টান বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন বিয়ের একটি অংশ হওয়ায় প্রায় সকল বিয়েরই রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকে।
ব্যাখ্যা:২
কেউ যদি বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে তার ২ বৎসরের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা
৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে। তবে রেজিস্ট্রেশন না হলে বিয়ে বাতিল হবে না। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের
মাধ্যমে উভয়ের উপর কিছু দায়-দায়িত্ব বর্তায়।
ব্যাখ্যা:৩
১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিয়ে সম্পাদিত হয়। খ্রিস্টান বিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং একটি পবিত্র চুক্তি।
খ্রিস্টান বিয়ে লিখিত মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এবং রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। খ্রিস্টান বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় ধাপগুলো হলো:
  1. বিয়ের পাত্র-পাত্রীর পুরো নাম ও ডাক নাম এবং পেশা বা অবস্থা
  2. পাত্র-পাত্রীর আবাসস্থল ও বাসস্থানের ঠিকানা
  3. পাত্র-পাত্রী কতদিন ধরে ঐ এলাকায় বসবাস করছে তার প্রমাণ পত্র
  4. বিয়ে সম্পাদনের চার্চ বা অন্যকোন স্থান
নোটিশ প্রাপ্তির পর চার্চের ধর্মযাজক নোটিশটি খোলা জায়গায় লাগিয়ে দেবেন। যাতে নোটিশটি সকলের নজরে আসে।
এভাবে নোটিশ কয়েক সপ্তাহ ঝোলানো থাকবে যাতে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তিনি যেন আপত্তি করতে পারেন।
যদি কোন আপত্তি না পান তাহলে চার্চ প্রধান বিয়ের পক্ষগণের নিকট থেকে একটি ঘোষণা গ্রহণ করবেন।
এই ঘোষণাটি বিয়ের পক্ষগণ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে দিবেন যাতে থাকবে-
2) বিয়ের পাত্র-পাত্রীর মধ্যে জানামতে এমন কোন ঘনিষ্ট আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক নেই যাতে তাদের বিয়েতে আইনসম্মত বাধা আছে। 3)বিবাহের পাত্র-পাত্রী দুজনেই আইন অনুযায়ী সাবালক।
এই ঘোষণা সম্পন্ন হওয়ার কমপক্ষে ৪ দিন পর চার্চের ধর্মযাজক বিয়ের আবেদনকারীকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন।
সার্টিফিকেট জারির ২ মাসের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

ব্যাখ্যা:৪
একটি ইউনিয়নে ১ জন সরকারি বিয়ে রেজিষ্টার দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন। এই রেজিষ্টার জেলা রেজিষ্টার এবং জেলা রেজিষ্টার চূড়ান্তভাবে
রেজিস্ট্রেশন মহাপরিচালকের অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
ব্যাখ্যা:৫    
রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক, চার্চ অব ইংল্যান্ড অথবা চার্চ অব স্কটল্যান্ড এর কোন যাজক, নির্বাচিত কোন বিশপ, খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট ১৮৭২
এর আওতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোন মিনিষ্টার অব রিলিজিয়ন অথবা উক্ত এ্যাক্টের আওতায় নিযুক্ত কোন বিবাহ রেজিষ্টার খ্রিস্টান বিবাহ সম্পাদন ও    করতে পারেন।

বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৩

মোমবাতি তৈরির ব্যবসা

রচনা - কামরুল আলম
 
মোমবাতি তৈরি ব্যবসা 



দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে মোমবাতি অন্যতম। অল্প খরচের মধ্যে আলো পেতে মোমবাতি খুবই উপকারি পণ্য। কাঁচামাল হিসেবে প্যারাফিন ব্যবহার করে খুব সহজে মোমবাতি তৈরি করা যায়। বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় সময়ে আলো দানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, এমনকি শো পিস হিসেবেও নানা রঙ ও আকৃতির মোমবাতি ব্যবহার করা হচ্ছে।  একজন বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থানের জন্য মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

                          

          

                      ছবি: মোমবাতি 
                      ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর,ঢাকা।

বাজার সম্ভাবনা
গ্রাম বা শহর সব জায়গার মানুষ মোমবাতির ব্যবহার করে। মোমবাতি তৈরি করে নিজ এলাকা বা এলাকার বাইরে মুদি দোকান গুলোতে পাইকারী দরে বিক্রি করা যেতে পারে। সাধারণত বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা নানা রঙের মোমবাতির চাহিদা মূলত: শহরেই বেশি দেখা যায়। এ জাতীয় মোমবাতি শহরের সৌখিন পণ্য বিক্রির দোকানে সরবরাহ করা যেতে পারে।

ছবি: মোমবাতি প্যাকেটজাতকরণ
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর,ঢাকা।

 মূলধন 
আনুমানিক ৭৫০০-৮০০০ টাকার স্থায়ী উপকরণ এবং ৮০০-১০০০ টাকার কাঁচামাল কিনে মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন নিজের কাছে না থাকলে স্থানীয় ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ 
প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য মোমবাতি তৈরীতে অভিজ্ঞ এমন কোন ব্যক্তি, স্থানীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
 স্থায়ী উপকরণ
উপকরণ
পরিমাণ
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
প্রাপ্তিস্থান
কড়াই
১টি
১০০-১২০
তৈজসপত্রের দোকান
পাত্র
২টি
৬০-৬৫
তৈজসপত্রের দোকান
ছুরি
১টি
২৫-৩৫
তৈজসপত্রের দোকান
কাঁচি
১টি
৬০-৮০
স্টেশনারি দোকান
চামচ
৩টি
৬০-৭০
তৈজসপত্রের দোকান
মগ
১টি
১০-১৫
তৈজসপত্রের দোকান
বালতি
১টি
৬০-৬৫
তৈজসপত্রের দোকান
কৌটা
৪টি
২০-২৫
স্টেশনারি দোকান
ডাইস
১টি
,০০০-৭৫০০
তৈরি করে নেয়া যেতে পারে
মোট=৭,৩৯৫-৭৯৭৫ টাক
                            
                            

      তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।

                         ছবি: মোমবাতি বানানোর ডাইস
                         ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।

  • কাঁচামাল
উপকরণ
পরিমাণ
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
প্রাপ্তিস্থান
সাদা মোম/প্যারাফিন
১০ কেজি
৫৫০-৬০০
স্থানীয় কেমিক্যালের দোকান
স্টিয়ারিক এসিড
১ কেজি
৬০-৭০
স্থানীয় কেমিক্যালের দোকান
সুতা
২৫০ গ্রাম
২০-২২
মুদি দোকান
রং
৫০০ গ্রাম
১৫-২০
স্থানীয় কেমিক্যালের দোকান
সয়াবিন তেল
৫০ গ্রাম
৫-৭
মুদি দোকান
প্যাকেট
২৫টি
২৫-৩০
স্টেশনারি দোকান
লেবেল
২৫টি
৫-১০
স্টেশনারি দোকান
আঠা
আনুমানিক
১০-১৫
স্টেশনারি দোকান
                  মোট=৬৯০-৭৭৪টাকা     
                                                           
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।


ছবির :প্যারাফিন বা সাদা মোম
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।



মোমবাতি তৈরির নিয়ম 
প্রথম ধাপ 
মোম তৈরির ডাইস বা ছাঁচের দুটি অংশ একটি ছিঁটকিনি দিয়ে আটাকানো থাকে। এবং ডাইসের ভিতরে মোমবাতি আকৃতির কতগুলো খাঁজ থাকে। প্রথমে ডাইসের ছিটকিনি খুলে ছাঁচের দুইটি অংশ আলাদা করতে হবে। এরপর একটি কাপড়ে তেল নিয়ে ডাইসের ভিতরে থাকা খাঁজগুলো ভালো ভাবে মুছে নিতে হবে, যাতে করে    মোমগুলো খুব সহজে বের করা যায়।
দ্বিতীয় ধাপ 
ছাঁচের মধ্যে সলতে পরানোর জায়গা রয়েছে। সলতেগুলো উপর থেকে নিচ পর্যন্ত টান টান করে বেঁধে দিতে হবে
ছবি : ডাইসে সুতা লাগানো
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।

তৃতীয় ধাপ 
এরপর ছাঁচের ২টি অংশ এক সাথে আটঁকে দিতে হবে এবং ছাঁচের সাথে লাগানো পানির ট্যাংকে পানি ভরতে হবে। কারণ পানি ভরা থাকলে গরম মোম ঠান্ডা হতে সহজ হয়।
চতুর্থ ধাপ 
এবার চুলায় কড়াই বসাতে হবে। কড়াই গরম হলে তার মধ্যে সাদা শক্ত মোম (প্যারাফিন) দিতে হবে। মোম পুরোপুরি গলে যাবার আগেই কড়াইতে ১০ ভাগ মোমের সাথে ১ ভাগ স্টিয়ারিক এসিড মিশাতে হবে।
পঞ্চম ধাপ 
প্যারাফিন গলে যাবার পর বেশিক্ষণ চুলায় রাখা যাবে না। কারণ গলে যাওয়া প্যারাফিন বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে।
ষষ্ঠ ধাপ 
গলা মোম মগে বা চামচে করে আস্তে আস্তে মেশিনের খাঁজগুলোতে ঢালতে হবে।
ছবি: মোম ঢালা
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা

সপ্তম ধাপ 
মোম ঢালার খাঁজটি যতক্ষণ না পুরোপুরিভাবে ভরবে ততক্ষণ পর্যন্ত মোম ঢালতে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মোম ঢালার সময় খাঁজের ভেতরে যেন কোন ফাঁকা থেকে না যায়।
অষ্টম ধাপ 
২০/২৫ মিনিট পর মোমগুলো ঠান্ডা হলে ছাঁচের ২টি অংশ আলাদা করে মোমগুলো বের করে আনতে হবে।
নবম ধাপ 
এবার মোমের সলতের বাড়তি অংশগুলো সাইজ মত কাটতে হবে এবং মোমবাতি ভালোভাবে বসানোর জন্য নিচের অংশের তলাটি সমান করে কাটতে হবে। বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা মোম তৈরির জন্য সেই অনুযায়ী ছাঁচ তৈরি করতে হয়।
ছবি : মোম সংগ্রহ
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর,   ঢাকা।


  • সাবধানতা
মোমবাতি তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে-
  1. স্টিয়ারিক এসিড মোমের সাথে মেশানোর সময় সাবধান থাকতে হবে।
  2. মোমে যদি আগুন ধরে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে চুলা নিভিয়ে ঢাকনা দিয়ে কড়াই ঢেকে দিতে হবে।
  3. চুলার উপর কড়াই থাকা অবস্থায় রং মেশানো যাবে না, চুলা থেকে নামিয়ে রং মেশাতে হবে।
  4. মোম তৈরির কাচামাল থেকে ও তৈরির সময় শিশুদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
  5. কাজ শেষে মোমের ছাঁচটি পরিস্কার করে রাখলে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ  
  • খরচ 
স্থায়ী যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ
৪-৫ টাকা
কাঁচামাল বাবদ
৬৯০-৭৭৪ টাকা
জ্বালানী   
৪৫-৫০ টাকা
                                     মোট=৭৩৯-৮২৯ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।

  • আয় 
উপরের উপকরণ দিয়ে ২৫০টি মোমবাতি তৈরি করা সম্ভব।
১টি মোমবাতি বিক্রিতে আয়=৫-৬ টাকা।
২৫০টি মোমবাতি বিক্রিতে আয়=১২৫০-১৫০০ টাকা।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।

  • লাভ 
২৫০টি মোমবাতি বিক্রিতে আয়
১২৫০-১৫০০ টাকা।
২৫০টি মোমবাতি তৈরিতে খরচ
৭৩৯-৮২৯ টাকা
                                             লাভ=৫১১-৬৭১ টাকা 
অর্থাৎ ৫১১-৬৭১ টাকা লাভ করা সম্ভব। তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি লাভ হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।

স্থায়ী উপকরণগুলো একবার কিনলে অনেকদিন ধরে কাজ করা যাবে। ব্যবসার শুরুতেই এ খরচটি করতে পারলে পরবর্তীতে শুধু কাঁচামাল কিনে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : মোমবাতি ব্যবসার বাজার কেমন
উত্তর : গ্রাম বা শহর সব জায়গাতেই মোমবাতির চাহিদা রয়েছে।
প্রশ্ন ২ : মোমবাতি তৈরির ব্যবসা করতে কি পরিমাণ মূলধন লাগে
উত্তর : আনুমানিক ৮০০০ টাকার স্থায়ী উপকরণ এবং ১০০০ টাকার কাঁচামাল কিনে মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৩ : মোমবাতি তৈরি শিখতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কি না
উত্তর : প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য মোম তৈরীতে অভিজ্ঞ এমন কোন ব্যক্তি, স্থানীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে পারে।




কৃতজ্ঞতা স্বীকার 
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের, নজরুল ইসলামের নিকট থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে মোমবাতি তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এছাড়া মোমবাতি তৈরির ব্যবসা কনটেন্ট লেখার জন্য নিচের বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে।
  1. ঘোষ, স্বপন কুমার; ১৯৯৩; গ্রামীণ কুটির শিল্প, দে পাবলিশিং; কলকাতা-৭০০০০৭৩।
  2. ইব্রাহীম, মোহাম্মদ; ১৯৯৯; মোমবাতি তৈরী সাবান তৈরি: গ্রামীণ প্রযুক্তি সিরিজ-১, বিজ্ঞান গণশিক্ষা  কেন্দ্র; ঢাকা।
  3. বাবু, মুস্তাগিসুর রহমান ও বাদল, আলম জহিরূল, ২০০১; মোমবাতি; ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন; ঢাকা।