শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

চানাচুর তৈরির ব্যবসা

রচনা - কামরুল আলম




চানাচুর তৈরি

চানাচুর তৈরির ব্যবসা





অল্প পুঁজির ব্যবসার মধ্যে চানাচুর তৈরির ব্যবসা অন্যতম। বাড়িতে বসে খুব সহজে চানাচুর তৈরির পর  বাজারজাত করতে পারলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। বেসনের সাথে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে চানাচুর তৈরি করা হয়। মুখরোচক এ খাবারটি সব বয়সের  মানুষেরই খুবই পছন্দের ।
  • বাজার সম্ভাবনা 
  • মূলধন 
  • প্রশিক্ষণ 
  • প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • চানাচুর তৈরির নিয়ম 
  • আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
  • সচরাচর জিজ্ঞাসা 
28chanachur.JPG
  ছবি: প্যাকেটজাত চানাচুর
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।


বাজার সম্ভাবনা  
আমাদের দেশের মানুষ ঝালজাতীয় খাবার বেশি পছন্দ  করে। সেক্ষেত্রে চানাচুর একটি জনপ্রিয় খাবার। বিকালের নাস্তায় কিংবা অতিথি আপ্যায়নে শুধু চানাচুর বা মুড়ির সাথে মিশিয়ে চানাচুর খাওয়া হয়। আমাদের দেশে ছোট-বড় অনেক চানাচুর তৈরির কারখানা আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই স্থানীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।   অল্প পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। চানাচুর তৈরি করার পর সেগুলো-
  1. খাবারের দোকানে সরবরাহ করা যেতে পারে।
  2. নিজেই কোন দোকান দিয়ে সেখানে বিক্রি করা যেতে পারে ।
  3. অনেক সময় ক্রেতা বাড়ীতে এসেই কিনে নিয়ে যেতে পারে।
  4. নিজের তৈরি খাবারের প্রচার চালানোর জন্য প্রথমে প্রতিবেশীদেরকে জানানো যেতে পারে, স্থানীয় দোকানীর সাথে যোগাযোগ করা যায়।

মূলধন 
আনুমানিক ১৫০০-২০০০ টাকা মূলধন নিয়ে চানাচুর তৈরি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বড় আকারে চানাচুর তৈরি ব্যবসা শুরু করতে নিজের কাছে যদি প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তবে ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক), সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (আশা,গ্রামীন ব্যাংক,প্রশিকা,ব্রাক) থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ 
চানাচুর তৈরি শেখার জন্য তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তির কাছ থেকে বা রান্না বিষয়ক বই থেকে ধারণা নিয়ে চানাচুর তৈরি ব্যবসা শুরু করা যায়।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • স্থায়ী যন্ত্রপাতি 

উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
কড়াই
১টি
২৫০-২৬০
তৈজসপত্রের দোকান
ডাইস
১টি
১৫০-১৬০
বানিয়ে নিতে হয়

গামলা

১টি
৫০-৬০
তৈজসপত্রের দোকান

ছিদ্রযুক্ত চামচ

১টি
৪০-৪৫
তৈজসপত্রের দোকান

ডালা

২টি
৬০-৬৫
বাঁশের পণ্যের দোকান
                          মোট=৫৫০-৫৯০ টাকা 
তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর ২০০৯। 



1chanachur.jpg 2chanachur.jpg 3chanachur.JPG 4chanachur.jpg
ছবি: ছিদ্রযুক্ত চামচ   ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: চানাচুর বানানোর ডাইস, ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: বাদাম
 ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: চুলাতে তেলসহ কড়াই
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
5chanachur.jpg 19chanachur.JPG 20chanachur.JPG 21chanachur.JPG
ছবি: বেসন 
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া,
চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: চানাচুর প্যাকেটের লেবেল,
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া,
চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: ধনিয়া গুড়া
 ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া,
চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: মরিচ গুড়া
 ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া,
চাটমোহর, পাবনা।

·         কাঁচামাল (১০ কেজি চানাচুর তৈরির জন্য)

উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
বেসন
৭ কেজি
৪২০-৪৩৪
মুদি দোকান
বাদাম
৭০০ গ্রাম
৩০-৩২
মুদি দোকান
মরিচের গুড়া
২০ গ্রাম
৮-১০
মুদি দোকান
লবণ
১ কেজি
১৬-১৮
মুদি দোকান
কালিজিরা
এক চিমটি
৫-৬
মুদি দোকান
বিট লবণ
১০০ গ্রাম
৪-৫
মুদি দোকান
জিরা গুড়া
২০ গ্রাম
১০-১২
মুদি দোকান
খাবার সোডা
এক চিমটি
২-৩
মুদি দোকান
তেল
৩ কেজি
২৩৪-২৪০
মুদি দোকান
                                মোট=৭২৯-৭৬০ টাকা 
তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর ২০০৯।

চানাচুর তৈরির নিয়ম 
ধাপে ধাপে চানাচুর তৈরির কাজ করতে হবে।

১ম ধাপ  
বেসন, খাবার সোডা, লবণ, তেল ও পানি মেপে নিতে হবে। বেসন, খাবার সোডা, লবণ ও তেল গামলায় নিয়ে ভালভাবে মিশাতে হবে। এরপর এর সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে রুটির আটার মতো মন্ড তৈরি করতে হবে। চুলার উপর কড়াই বসিয়ে তেল ঢেলে গরম করে নিতে হবে।
8chanachur.JPG6chanachur.JPG7chanachur.JPG
  ছবি: চানাচুরের মন্ড তৈরী,
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া,চাটমোহর, পাবনা।


২য় ধাপ
 কড়াইয়ের উপর ডাইস বসিয়ে ডাইসের উপর মন্ড নিয়ে  পরিষ্কার হাত দিয়ে ঘষতে হবে। ডাইসের ছিদ্র দিয়ে গামলায় মোটা ঝুরি পড়বে। গামলা থেকে মোটা ঝুরি নিয়ে কড়াইয়ের গরম তেলে ভাজতে হবে। অল্প আচেঁ ঝুরিগুলো ভেজে তুলে রাখতে হবে।
9chanachur.JPG10chanachur.JPG 12chanachur.JPG11chanachur.JPG
ছবি: মন্ড থেকে চানাচুর তৈরী ,
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: কড়াইতে চানাচুর ভাজা, ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
14chanachur.JPG13chanachur.JPG
ছবি: ভাজার পর চানাচুর উঠানো, ছবি তোলার স্থান:  ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।

৩য় ধাপ  
এবার বাদামের দানাগুলো ভেজে নিতে হবে। ভাজা শেষে গামলায় তুলে রাখতে হবে এবং চানাচুর, বাদাম ও মসলাগুলো একসাথে মিশিয়ে পরিমাণমতো মেপে প্যাকেট করতে হবে।
15chanachur.JPG 17chanachur.JPG16chanachur.JPG 23chanachur.JPG22chanachur.JPG
ছবি: বাদাম ভাজা,
ছবি তোলার স্থান:   ধানকুনিয়া,
চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: চানাচুর ও বাদাম মেশানো,
ছবি তোলার স্থান:  ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: চানাচুরে ধনিয়া ও মরিচের গুড়া মেশানো
 ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া, চাটমোহর, পাবনা।
26chanachur.JPG 25chanachur.JPG24chanachur.JPG
ছবি: প্যাকেটের মুখ আটকানো  
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া,চাটমোহর, পাবনা।
ছবি: প্যাকেটজাতকরণ
ছবি তোলার স্থান: ধানকুনিয়া,চাটমোহর, পাবনা।

সাবধানতা 
  1. চানাচুর তৈরিকারীকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কাজের শুরুতেই সাবান দিয়ে হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  2. তৈরি চানাচুর মচমচে রাখার জন্য বায়শূন্য বয়াম বা পলিথিনের প্যাকেট রাখতে হবে।
  
আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
  • খরচ (১০ কেজিতে) 


কাঁচামাল বাবদ
৭২৯-৭৬০ টাকা
জ্বালানী
৪০-৪২ টাকা
স্থায়ী যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ
৩-৪ টাকা
                                    মোট=৭৭২-৮০৬ টাকা 
  তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর ২০০৯। 
  • আয় 
মাঠকর্ম,চাটমোহর থেকে জানা যায়,
১ কেজি চানাচুর বিক্রি হয় 
৯০-৯৫টাকা
১০ কেজি চানাচুর বিক্রি হয় 
৯০০-৯৫০ টাকা
  তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর ২০০৯।
  • লাভ 
১০ কেজি চানাচুর বিক্রি হয়  
৯০০-৯৫০ টাকা
১০ কেজি চানাচুর খরচ 
৭৭২-৮০৬ টাকা
লাভ =১২৮-১৪ টাকা 
(তবে সময় ও স্থান ভেদে লাভ কম বেশী হতে পারে)
  তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর ২০০৯। 

চানাচুর তৈরি করে খুব সহজেই এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। সারাবছরই চানাচুরের চাহিদা থাকে তাই এ ব্যবসা মোটামুটি লাভজনক। কম পুঁজি নিয়ে নারী-পুরুষ যে কেউ চানাচুর তৈরির ব্যবসা করে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : চানাচুর তৈরির প্রধান উপকরণ কি ? 
উত্তর : বেসনের সাথে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে চানাচুর তৈরি করা হয়।
প্রশ্ন ২ : চানাচুর তৈরি করে কোথায় বিক্রি করা যায় ?    
উত্তর : চানাচুর বিক্রি করে বিভিন্ন খাবারের দোকানে বা বাড়িতে বসেও পাইকারী ও খুচরা দরে বিক্রি করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৩ : চানাচুর তৈরির ব্যবসা শুরু করতে কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন হয়? 
উত্তর: আনুমানিক ১৫০০-২০০০ টাকা মূলধন নিয়ে চানাচুর তৈরি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৪ : তৈরি চানাচুর কতদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব ?
উত্তর : ভাজার সাথে সাথে বাতাস শুন্য প্যাকেটে ভরে রাখলে ৬ মাস চানাচুর ভাল রাখা সম্ভব।



কৃতজ্ঞতা স্বীকার 
পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার মোঃ মফিজ মোল্লার নিকট থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে চানাচুর তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। ছাড়া চানাচুর তৈরির ব্যবসা কনটেন্ট লেখার জন্য নিচের বইগুলোর সাহায্য নেয়া হয়েছে:
  1. ঢাকা আহছানিয়ামিশন প্রকাশনা-২১৫, সেপ্টেম্বর ২০০১, চানাচুর, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা-১২০৯।
  2. খান, মোঃ আলী আশরাফ, জানুয়ারী ১৯৯৭, কর্মসংস্থান সহজ উপায়, লীনা প্রকাশনী, সিরাজগঞ্জ।



শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

মাত্র ৪০ দিনে কামান ছয় লক্ষ টাকা ( একেবারেই বাস্তব)

রচনা - কামরুল আলম

 
ব্যবসা করার জন্যে বাংলাদেশের মত উপযুক্ত জায়গা আর হয় না। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবসাটি জানলে বাম্পার লাভ। যেসব ব্যবসায়ীদের চোখ কান খোলা তারা দেদারসে কামাই করে যাচ্ছেন। লস হচ্ছে না। আমি এখন যেই ব্যবসায়ির কথা আলাপ করব তিনি অনেক স্মার্ট ব্যবসায়ী। তার লস হয় কম। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই সে কামিয়েছে অনেক। সঠিক সময়ের বিনিয়োগে সে এক্সপারত।

এবারে মাত্র ৪০ দিনে সে কামাই করেছে ৭০০০০০ ( সাত লক্ষ টাকা মাত্র ) ।
রোজার সপ্তাহ খানেক আগে সে পিয়াজ কিনেছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার ( ৩৫০ বস্তা) । প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে। ঈদের আগে এবং পরে সহ সব পিয়াজ বিক্রি করেছে গড়ে ৬০ টাকা দরে ( পিয়াজের বর্তমান বাজার দর ৭৫ টাকা কেজি)। নষ্ট পিয়াজ, গোডাউন খরচ, লেবার খরচ ও অন্যান্য খরচ বাদে নীট লাভ ৬০০০০০ ( ছয় লক্ষ টাকা মাত্র )। আপনার তিন লক্ষ টাকা দশ বছর ব্যাঙ্কে রাখলে হয়ত এই লাভ পাবেন। তাও মূল্য স্পিতি হিসাবে আনলে নীট লাভ আরও কমে যাবে। আমাদের শিক্ষিত জনতার মিথ্যা সম্মান বোধ এর কারনে ও মূলধনের কারনে তারা আজ ব্যবসার সুফল থেকে পিছিয়ে।

এই ব্যক্তিই বাজেটের আগে দেখেছি দেদারসে সিগারেট কিনছেন। তার নিজস্ব গোডাউন আছে তাই সুবিধা। বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট। যেসব সিগারেট এর দাম বেশি বাড়বে সেগুলো বেশি কিনেছেন ( বিভিন্ন কোম্পানির টেরিটরি অফিসারদের ঘুষ দিলে এ সব খবর সহজে মিলে )। বাজেটের পরে সেই সিগারেট কোম্পানির চেয়ে কম রেটে বাজারে ছেড়েছেন। নীট লাভ কল্পনাতীত। সময় ও অনেক কম।

তবে সময়ের এই ব্যবসায় অনেক সময় লস ও হয়। লসের পরিমান লাভের চেয়ে অনেক কম। বাজার বুঝে মাল ছেড়ে দিতে পারলে তেমন লস হয় না। যেমন চিনির দাম বাড়বে বলে চিনি কিনে ধরা খেয়েছিলেন।

এই ব্যক্তি সবচেয়ে লাভ করেছিলেন পাম অয়েলের ব্যবসায়। এখন যদিও পাম অয়েলের সেই ব্যবসা নেই। বাজারে দাম পরতির দিকে।
এই রকম সময়ের ব্যবসায় ব্যবসায়ীদের যা জানতে হয় তা হল
১. বাজেতে প্রতি বছর কিসের দাম বাড়ে ( সিগারেট অবশ্যই)
২. রমজানে কিসের দাম বাড়ে ( পিয়াজ, রসুন, আদা অবশ্যই- এবার চিনির দাম বাড়েনি কিন্তু প্রতিবছর ই চিনির দাম বাড়ে )
৩. কুরবানির আগে কিসের দাম বাড়ে ( পিয়াজ, রসুন, আদা অবশ্যই )
৪. পহেলা বৈশাখে কিসের দাম বাড়ে ( ইলিশের দাম)
৫. অন্যান্য অনুষ্ঠানে কিসের দাম বাড়ে ( বিজয় দিবসে ফুলের দাম )
৬. আদার ব্যপারির জাহাজের খবর আগে রাখত না, এখন রাখলে বহুত লাভ। কোন কোন মৌসুমে কি কি কত পরিমাণে আমদানি হবে এবং সেই অনুযায়ী ঘাটতি কেমন হবে। যত ঘাটতি তত লাভ। যে পন্য প্রয়জনের অধিক আমদানি হয় সেই পন্য বাদ দিতে হবে, এসবে সর্বদাই লস হয়।
৭. কাচামালের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত চোখ কান খোলা রাখতে হয়।
আরও কিছু টিপস আছে হয়ত, আমাকে তো সব বলবে না, তাই না। মূলধন আর আগ্রহ থাকলে নেমে পড়তে পারেন।
সমাজে এই লোকগুলোকে আমরা মজুদদার হিসেবে জানি। এদের কারনেই মূল্য ব্রিদ্দি ঘটে। সমস্ত অতিরিক্ত টাকা এদের পকেতেই যায়। এরা অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা অর্জন করে। মাতাপিতা ছাড়া এই বাংলাদেশে এদের প্রভাব ব্যপক। ঈদে এরা প্রচুর দান খয়রাত করেন। বড় বড় পার্টির বড় বড় নেতাদের সাথে এদের থাকে ব্যপক দহরম মহরম। এরাই এই ঘুণে ধরা সমাজের প্রভাবশালী ও প্রতাপশালী ব্যক্তি। এদের কেই আমরা সর্বাধিক সম্মান দেই। এদের কেই আমরা দাওয়াত দিয়ে খাওয়াইতে পসন্দ করি। এরা বাসায় আসলে আমরা ধন্য হই।
তাই এই লোকদের কাতারে আস্তে চাইলে উপরের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩

রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা

রচনা - জাতীয় ই তথ্য কোষ



রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা 


 

তরকারির স্বাদ বাড়ানোর জন্য রসুন ব্যবহার করা হয়। তরকারিতে দেয়ার পাশাপাশি রসুনের আচারও তৈরি করা যায়, যা ভাত দিয়ে খেতে খুব সুস্বাদু লাগে। সামান্য পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি যে কোন নারী রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

  •  বাজার সম্ভাবনা 
  •  মূলধন 
  •  প্রশিক্ষণ  
  •  প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান  
  •  রসুনের আচার তৈরির নিয়ম 
  •  আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
  •  সচরাচর জিজ্ঞাসা
ছবি: রসুনের আচার
বাজার সম্ভাবনা 
উৎপাদন মৌসুমে রসুনের দাম কম থাকে, তখন রসুন কিনে আচার তৈরি করে বিক্রি করতে পারলে বেশ লাভবান হওয়া যায়। রসুন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এছাড়া স্বাদের কারণে রসুনকে সবাই বেশ পছন্দ করে। তাই রসুনের আচার তৈরি বেশ সম্ভাবনাময় একটি ব্যবসা হতে পারে।

মূলধন 
আনুমানিক ৮০০-১০০০ টাকা মূলধন নিয়ে রসুনের আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বড় আকারে এ ব্যবসা শুরু করতে যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তবে ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ 
স্থানীয় রান্না শেখানোর প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ   পরিমাণ  আনুমানিক মূল্য (টাকা)  প্রাপ্তিস্থান 
বড় কড়াই ১টি ৩৫০-৩৬০ তৈজসপত্রের দোকান
বাঁশের চালুনী ১টি ৩০-৩৫ বাঁশের পণ্য বিক্রির দোকান
কাঁচের বৈয়াম ৫টি ১১০-১২০ তৈজসপত্রের দোকান
                                মোট=৪৯০-৫১৫ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

  • কাঁচামাল 
উপকরণ    পরিমাণ  আনুমানিক মূল্য (টাকা)  প্রাপ্তিস্থান 
ক) রসুন ১ কেজি ১১৫-১২০ মুদি দোকান
খ) কভারিং সস
ভিনেগার ৫০০ গ্রাম ১৫-১৭ মুদি দোকান
লবণ ৫০ গ্রাম ২-৩ মুদি দোকান
রসুন ৫০ গ্রাম ৫-৬ মুদি দোকান
হলুদ ১০ গ্রাম ২-৩ মুদি দোকান
লাল মরিচ ২০ গ্রাম ৪-৫ মুদি দোকান
জায়ফল ০৫ গ্রাম ১-২ মুদি দোকান
সরিষা ১০ গ্রাম ২-৩ মুদি দোকান
চিনি ৫০ গ্রাম ৫-৬ মুদি দোকান
সরিষার তেল ১০০ মি.লি. ৭-৮ মুদি দোকান
গ) কভারিং তেল
সরিষার তেল ৫০ মি.লি. ৩-৪ মুদি দোকান
                                  মোট=১৬১-১৭৭টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।


1.JPG 2.JPG 3.JPG 4.JPG
ছবি:রসুন
ছবি তোলার স্থান:নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

ছবি: লবণ
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
ছবি: ভিনেগার
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
ছবি : সরিষার তেল
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 5.JPG 6.JPG  7.JPG  8.JPG 
 
ছবি: সরিষা
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 
ছবি: মরিচের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 
ছবি: হলুদের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান:
নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
  ছবি : রসুনের কোষগুলো  ছাড়িয়ে নেয়া, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

রসুনের আচার তৈরির নিয়ম 
১ম ধাপ 
পরিস্কার পরিছন্ন রসুন সংগ্রহ করে কোষগুলো আলাদা করে ছাড়িয়ে নিতে হবে এবং পানিতে লবণ মিশিয়ে এ কোষগুলো ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
13.JPG 14.JPG 15.JPG 16.JPG
ছবি: মসলায় রসুনের কোষগুলো ঢালা, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। ছবি: জ্বাল দেয়ার সময় চিনি মেশানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। ছবি:জ্বাল দেয়ার সময় সাইট্টিক এসিড মেশানো ,ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। ছবি: তৈরিকৃত রসুনের আচার ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
 9.JPG 10.JPG  11.JPG  12.JPG 
  ছবি: রসুন পানিতে ফুটানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।   ছবি: সব মসলার সাথে ভিনেগার মেশানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।   ছবি: গরম তেলে মসলা ঢেলে জ্বাল দেয়া, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।   ছবি: জ্বাল দেয়া মসলায় চিনি মেশানো, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

২য় ধাপ 
বাঁশের চালুনীর সাহায্যে রসুনের কোষের খোসাগুলো ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। এরপর নরম ও ঝাঁঝালো গন্ধ দূর করার জন্য রসুনগুলো ফুটন্ত পানিতে ৫ মিনিট ফুটাতে হবে এবং চালুনীতে ঢেলে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
৩য় ধাপ 
কভারিং সস তৈরির জন্য সব মসলা পাটায় বেটে নিতে হবে। তারপর ভিনেগারের সাথে মসলাগুলো মিশাতে হবে। ১০ গ্রাম পরিমাণ সরিষা, ১০০ মি.লি গরম তেলে ভেজে নিয়ে ভিনেগার মিশানো মসলাগুলো কড়াইয়ে ঢেলে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে। এবং চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে এর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ চিনি মিশাতে হবে।
৪র্থ ধাপ 
এবার রসুনের কোষগুলো এই মিশ্রণের মধ্যে ঢেলে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে এবং বাকী অর্ধেক চিনি, সাইট্রিক এসিড এবং লবণ মিশিয়ে আরো কিছুক্ষণ জ্বাল দিলে আচার তৈরি হয়ে যাবে। এবার আচার ঠান্ডা করে কাঁচের বৈয়ামে ভরে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
  • খরচ  
স্থায়ী যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ ৩-৪ টাকা
কাঁচামাল বাবদ খরচ ১৬১-১৭৭ টাকা
জ্বালানী বাবদ খরচ ২০-২৫ টাকা
                                           মোট=১৮৪-২০৬ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

17.JPG
ছবি: রসুনের আচার বোতলজাতকরণ, ছবি তোলার স্থান : নাখাল পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

  • আয় 
মাঠকর্ম, চাটমোহর থেকে জানা যায়, ১ কেজি রসুনে ১.৫ কেজি আচার তৈরি করা সম্ভব।
১ কেজি আচার বিক্রি হয় ২০০-২২০ টাকা
১.৫ কেজি আচার বিক্রি হয় ৩০০-৩১০ টাকা
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

  • লাভ 
১.৫ কেজি আচারে আয় হয় ৩০০-৩১০ টাকা
১.৫ কেজি আচার তৈরিতে খরচ হয় ১৮৪-২০৬ টাকা
                                           লাভ =১১৬-১০৪ টাকা 
অর্থাৎ ১০৪-১১৬ টাকা লাভ করা সম্ভব। তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি লাভ হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, নভেম্বর-২০০৯।

বছরের যে কোন মৌসুমে রসুনের আচার তৈরি করা যায়। কিছু দিন পর পর আচার তৈরি করে স্থানীয় দোকানে সরবরাহ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : রসুনের আচারের ব্যবসাতে কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন? 
উত্তর : আনুমানিক ৮০০-১০০০ টাকা মূলধন নিয়ে রসুনের আচার তৈরি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
প্রশ্ন ২ : রসুনের আচার তৈরির পর কোথায় বিক্রি করা যায় ? 
উত্তর : রসুনের আচার তৈরির পর সেগুলো পাইকারি বা  খুচরা দরে বেকারী দোকানগুলোতে বিক্রি করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৩ : রসুনের আচার তৈরির জন্য কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কি ? 
উত্তর : স্থানীয়ভাবে রান্না শেখানোর যে সকল প্রতিষ্ঠান থাকে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।





কৃতজ্ঞতা স্বীকার 
পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার শিরিনা খাতুনের নিকট থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে রসুনের আচার তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এছাড়া রসুনের আচার তৈরির ব্যবসা কনটেন্ট লেখার জন্য নিচের বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে।
  1. আজমী, সাহেদা; হোসেন, এনায়েত, আলী আহমেদ, রসুনের আচার তৈরি, সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, এগ্রো প্রসেসিং প্রোগ্রাম, আইটিডিজি-বাংলাদেশ।

পিঠা ঘর

রচনা -জাতীয় ই তথ্যকোষ
 পিঠা ঘর 
 

পিঠা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে। সাধারণত নতুন ধান উঠে বলে শীতকালে পিঠা বেশি তৈরি করা হয়। তবে এখন সারাবছরই নানা রকম পিঠা পাওয়া যায়। পিঠা পছন্দ করে না এরকম মানুষ আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া  কঠিন। তাই কর্মসংস্থানের জন্য নারী, পুরুষ যে কেউ পিঠা ঘর দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
8pitha ghor.jpg
ছবি: ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
বাজার সম্ভাবনা 
নানান রকম পিঠা তৈরি করে দোকানে রেখে পিঠা বিক্রি করা সম্ভব। পিঠা মুখরোচক খাবার বলে আমাদের দেশে সারাবছরই নানা রকম পিঠার চাহিদা থাকে। এছাড়া আজকাল বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠান যেমন-জন্মদিন, গায়ে হলুদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে পিঠার আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে অর্ডার অনুযায়ী পিঠা সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব।

স্থান নির্বাচন   
বাজারের কেন্দ্র স্থল বা যেখানে লোক সমাগম হয় সেই রকম জায়গায় পিঠা ঘর দিলে সেটা সবার নজরে আসবে এবং ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। আবার বাজারের কাছে বাড়ি হলে বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় দোকান ঘর তৈরি করে নেয়া যাবে। এছাড়া স্কুল-কলেজের সামনে পিঠা ঘর দিলে সেখানেও ভালো বিক্রি হবে।
দুই ভাবে পিঠা ঘর তৈরি করে পিঠা বিক্রি করা যায়।
১. স্থায়ী দোকান
২. ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর

  • স্থায়ী দোকান  
স্থায়ী দোকান দেবার জন্য দোকান ঘর প্রয়োজন হবে। বাজারে, স্কুল-কলেজের সামনে বা আবাসিক এলাকায় পিঠা ঘর তৈরি করে বিক্রি করা যাবে। পিঠা ঘরের আয়তনের উপর নির্ভর করে কতগুলো চেয়ার টেবিল লাগবে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুন্দর ও পরিপাটিভাবে দোকান ঘর সাজাতে হবে। দোকান ছোট হলে বেশি চেয়ার টেবিল না রাখাই ভালো। টেবিলের উপর পরিস্কার পানির গ্লাস ও পানির জগ রাখতে হবে। পিঠা রাখার জন্য স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা একটা শেলফ কিনে বা তৈরি করে নিলে প্রতি তাকে ট্রের উপর বিভিন্ন রকম পিঠা সাজিয়ে রাখা যাবে। তাহলে ক্রেতারা সহজেই বুঝতে পারবে কি কি পিঠা আছে। পিঠা পরিবেশনের জন্য পরিস্কার প্লেট-গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। স্থায়ী দোকান একটি নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠে। সাধারণত সকাল বেলা এসব দোকান খোলা হয় এবং রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। পুঁজি অল্প হলে চেয়ার টেবিলের পরিবর্তে বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়া ক্রেতারা যাতে পিঠা কিনে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য পিঠা সরবরাহের জন্য কাগজের ঠোঙ্গা বা প্যাকেটের ব্যবস্থা রাখলে ভালো হবে। পিঠার দোকানে চায়ের ব্যবস্থা রাখলে পিঠার সাথে সাথে চাও বিক্রি করা সম্ভব হবে।


  • ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর 
অল্প পুঁজি হলে স্থায়ী দোকানের পরিবর্তে ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর দেওয়াও সম্ভব। এক্ষেত্রে একটা ভ্যান এর উপর পিঠা ঘর সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব। পিঠা রাখার জন্য ভ্যান এর উপর একটা অংশ আলাদা কাঁচে ঘিরে নিলে পিঠাতে ধূলাবালি পড়বে না। এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের গ্লাস ও প্লেট ব্যবহার করা সুবিধাজনক। এ ব্যবস্থা শহরের জন্য বেশি প্রযোজ্য। শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, খেলার মাঠ, মেলা, শিশুপার্ক ও অন্যান্য পার্কে ঘুরে ঘুরে পিঠা বিক্রি করে ভালো ব্যবসা করা সম্ভব।

মূলধন 
পিঠা ঘর দেবার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে আনুমানিক ৯০০ থেকে ১০৭০ টাকার প্রয়োজন হবে। দোকান ভাড়া নিতে হলে দোকান ঘরের ভাড়া ও পজিশন বাবদ বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতিদিন পিঠা তৈরির কাঁচামাল কেনার জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা))-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ 
অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে ব্যবসার বিস্তারিত জেনে নিলে ব্যবসা শুরু করা সহজ হবে। বিভিন্ন এলাকার পিঠা তৈরি করা শিখে নিয়ে সে সব পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া বাজারে বিভিন্ন পিঠা তৈরির বই পাওয়া যায়। সেই সব বই পড়ে নতুন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ  পরিমাণ  আনুমানিক মূল্য (টাকা)  প্রাপ্তিস্থান 
চুলা ২টি ২০০-২২০ হার্ডওয়ারের দোকান
মাটির হাঁড়ি পাতিল ২টি ১০০-১২০ মাটির জিনিসপত্রের দোকান
কড়াই ১টি ১০০-১২০ তৈজসপত্রের দোকান
ছাঁচ ৩/৪টি ৮০-১০০ তৈজসপত্রের দোকান
ঢাকনা ২টি ৮০-৯০ তৈজসপত্রের দোকান
খুন্তি ২টি ৬০-৭০ তৈজসপত্রের দোকান
প্লেট (প্লাস্টিকের) ১২টি ১২০-১৫০ তৈজসপত্রের দোকান
গ্লাস ১২টি ১২০-১৫০ তৈজসপত্রের দোকান
চামচ ২টি ৪০-৫০ তৈজসপত্রের দোকান
                                  মোট=৯০০-১০৭০ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯



1pitha ghor.jpg 5pitha ghor.jpg 6pitha ghor.jpg 7pitha ghor.jpg
ছবি: চালের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।

ছবি: পানিতে মেশানো চালের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: কড়াইতে মিশ্রণ ঢালা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: পিঠা ভাজা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
পিঠা তৈরির নিয়ম  
১। বেশির ভাগ পিঠাই চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চালের গুঁড়া ঝরঝরে ও মসৃণ হয়। গুঁড়া ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
২। বাজার থেকে ভালো মানের টাটকা গুঁড়, ময়দা ও চিনি কিনে আনতে হবে।
৩। পিঠা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে সব পিঠাই যেন মোটামুটি একই মাপের হয়। চিতই পিঠা তৈরির জন্য বাজারে মাটির খোলা বা পাত্র কিনতে পাওয়া যায়। সেটা কিনে নিলে পিঠা তৈরি করতে সুবিধা হবে। সব পিঠা একই মাপের হবে।
৪। ভাঁপা পিঠা তৈরির জন্য সুন্দর মাপের একটা বাটি নিলে পিঠাগুলো দেখতে সুন্দর হয়।
৫। বাজারে পিঠা তৈরির জন্য নানান নকশার ছাঁচ কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে নিলে নতুন নতুন নকশার পিঠা তৈরি করা যাবে।
৬। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন পিঠা তৈরির নিয়ম শিখে নিয়ে সেসব পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া পিঠা তৈরির বই পড়েও নতুন পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া নিজে নতুন নতুন ধরণ ও স্বাদের পিঠা তৈরি করলে তা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।


2pitha ghor.jpg 3pitha ghor.jpg 4pitha ghor.jpg
ছবি: চালের গুঁড়ায় গুঁড় মেশানো
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: ভাঁপে দেয়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: ভাপা পিঠা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।

পিঠা ঘর পরিচালনার নিয়মকানুন 
যে কোন ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে-
১. ভালো জিনিস রাখা: ক্রেতাদের কাছে কখনও খারাপ জিনিস বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ কেউই টাকা দিয়ে খারাপ জিনিস কিনতে চায় না। তাই দোকানে ভালো জিনিস রাখতে হবে।

২. সুন্দর ব্যবহার: ক্রেতার সাথে ভালো ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো ব্যবহার পেলে ক্রেতার দোকানে আসবে। সম্ভব হলে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হবে। যেমন কেউ বেশি গুঁড় বা ঝাল চাইলে সম্ভব হলে তা দিতে হবে।

৩. পরিস্কার পরিচ্ছনতা: পিঠার দোকান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে দোকানের আশপাশ যেন স্যাঁত স্যাঁতে না হয়। চেয়ার, টেবিল, গ্লাস, প্লেট, চামচ পরিস্কার রাখতে হবে। দোকানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা উচিত। একজনের ব্যবহারের পর প্লেট, গ্লাস পরিস্কার পানি ও সাবান গুঁড়া দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে।

৪. জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করা: দোকানে যেসব জিনিসপত্র আছে তার একটা তালিকা রাখলে ভালো। তালিকা থাকলে সপ্তাহের শেষে কেনাকাটা করতে সুবিধা হয়। তাছাড়া দোকানের জিনিসপত্রের হিসাব রাখাও সহজ হয়।

৫. চাহিদা বুঝে মালামাল রাখা: যে সব পিঠা বেশি বিক্রি হয় যেসব পিঠা তৈরির উপকরণ বেশি রাখতে হবে এবং সেই সব পিঠা বেশি তৈরি করতে হবে।

সাবধানতা 
  1. দোকান বা বিক্রি করার স্থানের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  2. প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি পরিস্কার রাখতে হবে।
  3. বিশুদ্ধ খাবার পানি রাখতে হবে।

আয় ও লাভের হিসাব 
পিঠা তৈরির পর তা সুন্দরভাবে পরিবেশন করতে হবে।
প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার পিঠা তৈরি করে ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে।
  • মোট খরচ 
খরচের ক্ষেত্র  আনুমানিক খরচ (টাকা) 
পিঠা তৈরির কাঁচামাল কিনতে খরচ ৫০০-৬০০ টাকা
স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ ১০-১৫ টাকা
                      পিঠা তৈরিতে মোট খরচ  ৫১০-৬১৫ টাকা
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  • আয় ও লাভের পরিমাণ 
পিঠা বিক্রি করা যাবে  ৭০০-৮৫০ টাকা 
পিঠা তৈরি করতে খরচ ৫১০-৬১৫ টাকা
          প্রতিদিন মোট লাভ  ১৯০-২৩৫ টাকা
এছাড়া বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর আয় ও লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠানামা করে। তাই এ ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 

পিঠা ঘর স্থাপনের জন্য অল্প জায়গা ও খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। তাই আগ্রহী নারী-পুরুষ যে কেউ পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : কিভাবে পিঠা তৈরি করে ব্যবসা করা যায় ? 
উত্তর : স্থায়ী দোকান দিয়ে বা ভ্রাম্যমানভাবে পিঠা ঘর দিয়ে পিঠা বিক্রি করা সম্ভব।
প্রশ্ন ২ : পিঠা ঘর দেবার জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে কি করতে হবে ? 
উত্তর : যদি ঋণের প্রয়োজন হয় তাহলে ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।