পিঠা ঘর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পিঠা ঘর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩

পিঠা ঘর

রচনা -জাতীয় ই তথ্যকোষ
 পিঠা ঘর 
 

পিঠা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে। সাধারণত নতুন ধান উঠে বলে শীতকালে পিঠা বেশি তৈরি করা হয়। তবে এখন সারাবছরই নানা রকম পিঠা পাওয়া যায়। পিঠা পছন্দ করে না এরকম মানুষ আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া  কঠিন। তাই কর্মসংস্থানের জন্য নারী, পুরুষ যে কেউ পিঠা ঘর দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
8pitha ghor.jpg
ছবি: ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
বাজার সম্ভাবনা 
নানান রকম পিঠা তৈরি করে দোকানে রেখে পিঠা বিক্রি করা সম্ভব। পিঠা মুখরোচক খাবার বলে আমাদের দেশে সারাবছরই নানা রকম পিঠার চাহিদা থাকে। এছাড়া আজকাল বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠান যেমন-জন্মদিন, গায়ে হলুদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে পিঠার আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে অর্ডার অনুযায়ী পিঠা সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব।

স্থান নির্বাচন   
বাজারের কেন্দ্র স্থল বা যেখানে লোক সমাগম হয় সেই রকম জায়গায় পিঠা ঘর দিলে সেটা সবার নজরে আসবে এবং ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। আবার বাজারের কাছে বাড়ি হলে বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় দোকান ঘর তৈরি করে নেয়া যাবে। এছাড়া স্কুল-কলেজের সামনে পিঠা ঘর দিলে সেখানেও ভালো বিক্রি হবে।
দুই ভাবে পিঠা ঘর তৈরি করে পিঠা বিক্রি করা যায়।
১. স্থায়ী দোকান
২. ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর

  • স্থায়ী দোকান  
স্থায়ী দোকান দেবার জন্য দোকান ঘর প্রয়োজন হবে। বাজারে, স্কুল-কলেজের সামনে বা আবাসিক এলাকায় পিঠা ঘর তৈরি করে বিক্রি করা যাবে। পিঠা ঘরের আয়তনের উপর নির্ভর করে কতগুলো চেয়ার টেবিল লাগবে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুন্দর ও পরিপাটিভাবে দোকান ঘর সাজাতে হবে। দোকান ছোট হলে বেশি চেয়ার টেবিল না রাখাই ভালো। টেবিলের উপর পরিস্কার পানির গ্লাস ও পানির জগ রাখতে হবে। পিঠা রাখার জন্য স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা একটা শেলফ কিনে বা তৈরি করে নিলে প্রতি তাকে ট্রের উপর বিভিন্ন রকম পিঠা সাজিয়ে রাখা যাবে। তাহলে ক্রেতারা সহজেই বুঝতে পারবে কি কি পিঠা আছে। পিঠা পরিবেশনের জন্য পরিস্কার প্লেট-গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। স্থায়ী দোকান একটি নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠে। সাধারণত সকাল বেলা এসব দোকান খোলা হয় এবং রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। পুঁজি অল্প হলে চেয়ার টেবিলের পরিবর্তে বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়া ক্রেতারা যাতে পিঠা কিনে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য পিঠা সরবরাহের জন্য কাগজের ঠোঙ্গা বা প্যাকেটের ব্যবস্থা রাখলে ভালো হবে। পিঠার দোকানে চায়ের ব্যবস্থা রাখলে পিঠার সাথে সাথে চাও বিক্রি করা সম্ভব হবে।


  • ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর 
অল্প পুঁজি হলে স্থায়ী দোকানের পরিবর্তে ভ্রাম্যমান পিঠা ঘর দেওয়াও সম্ভব। এক্ষেত্রে একটা ভ্যান এর উপর পিঠা ঘর সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব। পিঠা রাখার জন্য ভ্যান এর উপর একটা অংশ আলাদা কাঁচে ঘিরে নিলে পিঠাতে ধূলাবালি পড়বে না। এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের গ্লাস ও প্লেট ব্যবহার করা সুবিধাজনক। এ ব্যবস্থা শহরের জন্য বেশি প্রযোজ্য। শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, খেলার মাঠ, মেলা, শিশুপার্ক ও অন্যান্য পার্কে ঘুরে ঘুরে পিঠা বিক্রি করে ভালো ব্যবসা করা সম্ভব।

মূলধন 
পিঠা ঘর দেবার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে আনুমানিক ৯০০ থেকে ১০৭০ টাকার প্রয়োজন হবে। দোকান ভাড়া নিতে হলে দোকান ঘরের ভাড়া ও পজিশন বাবদ বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতিদিন পিঠা তৈরির কাঁচামাল কেনার জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা))-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ 
অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে ব্যবসার বিস্তারিত জেনে নিলে ব্যবসা শুরু করা সহজ হবে। বিভিন্ন এলাকার পিঠা তৈরি করা শিখে নিয়ে সে সব পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া বাজারে বিভিন্ন পিঠা তৈরির বই পাওয়া যায়। সেই সব বই পড়ে নতুন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ  পরিমাণ  আনুমানিক মূল্য (টাকা)  প্রাপ্তিস্থান 
চুলা ২টি ২০০-২২০ হার্ডওয়ারের দোকান
মাটির হাঁড়ি পাতিল ২টি ১০০-১২০ মাটির জিনিসপত্রের দোকান
কড়াই ১টি ১০০-১২০ তৈজসপত্রের দোকান
ছাঁচ ৩/৪টি ৮০-১০০ তৈজসপত্রের দোকান
ঢাকনা ২টি ৮০-৯০ তৈজসপত্রের দোকান
খুন্তি ২টি ৬০-৭০ তৈজসপত্রের দোকান
প্লেট (প্লাস্টিকের) ১২টি ১২০-১৫০ তৈজসপত্রের দোকান
গ্লাস ১২টি ১২০-১৫০ তৈজসপত্রের দোকান
চামচ ২টি ৪০-৫০ তৈজসপত্রের দোকান
                                  মোট=৯০০-১০৭০ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯



1pitha ghor.jpg 5pitha ghor.jpg 6pitha ghor.jpg 7pitha ghor.jpg
ছবি: চালের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।

ছবি: পানিতে মেশানো চালের গুঁড়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: কড়াইতে মিশ্রণ ঢালা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: পিঠা ভাজা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
পিঠা তৈরির নিয়ম  
১। বেশির ভাগ পিঠাই চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চালের গুঁড়া ঝরঝরে ও মসৃণ হয়। গুঁড়া ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
২। বাজার থেকে ভালো মানের টাটকা গুঁড়, ময়দা ও চিনি কিনে আনতে হবে।
৩। পিঠা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে সব পিঠাই যেন মোটামুটি একই মাপের হয়। চিতই পিঠা তৈরির জন্য বাজারে মাটির খোলা বা পাত্র কিনতে পাওয়া যায়। সেটা কিনে নিলে পিঠা তৈরি করতে সুবিধা হবে। সব পিঠা একই মাপের হবে।
৪। ভাঁপা পিঠা তৈরির জন্য সুন্দর মাপের একটা বাটি নিলে পিঠাগুলো দেখতে সুন্দর হয়।
৫। বাজারে পিঠা তৈরির জন্য নানান নকশার ছাঁচ কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে নিলে নতুন নতুন নকশার পিঠা তৈরি করা যাবে।
৬। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন পিঠা তৈরির নিয়ম শিখে নিয়ে সেসব পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া পিঠা তৈরির বই পড়েও নতুন পিঠা তৈরি করা যাবে। এছাড়া নিজে নতুন নতুন ধরণ ও স্বাদের পিঠা তৈরি করলে তা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।


2pitha ghor.jpg 3pitha ghor.jpg 4pitha ghor.jpg
ছবি: চালের গুঁড়ায় গুঁড় মেশানো
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: ভাঁপে দেয়া
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।
ছবি: ভাপা পিঠা
ছবি তোলার স্থান: নীলক্ষেত, ঢাকা।

পিঠা ঘর পরিচালনার নিয়মকানুন 
যে কোন ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে-
১. ভালো জিনিস রাখা: ক্রেতাদের কাছে কখনও খারাপ জিনিস বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ কেউই টাকা দিয়ে খারাপ জিনিস কিনতে চায় না। তাই দোকানে ভালো জিনিস রাখতে হবে।

২. সুন্দর ব্যবহার: ক্রেতার সাথে ভালো ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো ব্যবহার পেলে ক্রেতার দোকানে আসবে। সম্ভব হলে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হবে। যেমন কেউ বেশি গুঁড় বা ঝাল চাইলে সম্ভব হলে তা দিতে হবে।

৩. পরিস্কার পরিচ্ছনতা: পিঠার দোকান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে দোকানের আশপাশ যেন স্যাঁত স্যাঁতে না হয়। চেয়ার, টেবিল, গ্লাস, প্লেট, চামচ পরিস্কার রাখতে হবে। দোকানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা উচিত। একজনের ব্যবহারের পর প্লেট, গ্লাস পরিস্কার পানি ও সাবান গুঁড়া দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে।

৪. জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করা: দোকানে যেসব জিনিসপত্র আছে তার একটা তালিকা রাখলে ভালো। তালিকা থাকলে সপ্তাহের শেষে কেনাকাটা করতে সুবিধা হয়। তাছাড়া দোকানের জিনিসপত্রের হিসাব রাখাও সহজ হয়।

৫. চাহিদা বুঝে মালামাল রাখা: যে সব পিঠা বেশি বিক্রি হয় যেসব পিঠা তৈরির উপকরণ বেশি রাখতে হবে এবং সেই সব পিঠা বেশি তৈরি করতে হবে।

সাবধানতা 
  1. দোকান বা বিক্রি করার স্থানের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  2. প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি পরিস্কার রাখতে হবে।
  3. বিশুদ্ধ খাবার পানি রাখতে হবে।

আয় ও লাভের হিসাব 
পিঠা তৈরির পর তা সুন্দরভাবে পরিবেশন করতে হবে।
প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার পিঠা তৈরি করে ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে।
  • মোট খরচ 
খরচের ক্ষেত্র  আনুমানিক খরচ (টাকা) 
পিঠা তৈরির কাঁচামাল কিনতে খরচ ৫০০-৬০০ টাকা
স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ ১০-১৫ টাকা
                      পিঠা তৈরিতে মোট খরচ  ৫১০-৬১৫ টাকা
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  • আয় ও লাভের পরিমাণ 
পিঠা বিক্রি করা যাবে  ৭০০-৮৫০ টাকা 
পিঠা তৈরি করতে খরচ ৫১০-৬১৫ টাকা
          প্রতিদিন মোট লাভ  ১৯০-২৩৫ টাকা
এছাড়া বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর আয় ও লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠানামা করে। তাই এ ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কাঁটাবন, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 

পিঠা ঘর স্থাপনের জন্য অল্প জায়গা ও খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। তাই আগ্রহী নারী-পুরুষ যে কেউ পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : কিভাবে পিঠা তৈরি করে ব্যবসা করা যায় ? 
উত্তর : স্থায়ী দোকান দিয়ে বা ভ্রাম্যমানভাবে পিঠা ঘর দিয়ে পিঠা বিক্রি করা সম্ভব।
প্রশ্ন ২ : পিঠা ঘর দেবার জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে কি করতে হবে ? 
উত্তর : যদি ঋণের প্রয়োজন হয় তাহলে ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।