শনিবার, ২৮ মে, ২০১১

সাপ যখন আকাশে উড়ে

রচনা - কামরুল আলম

সাপ কি আকাশে উড়তে পারে? পারে বৈকি। তবে সব গুলো নয়। মোটামুটি ৫ প্রজাতির সাপ উড়তে পারে। তবে এই উড়াকে পাখির আকাশে উড়ার সাথে তুলনা করা যাবে না। সাপের উড়ার পদ্ধতি অনেকটা গ্লাইডিং এর মত। মোটামুটি ৮০ ফিট দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম এরা। লাফ দেয়ার সময় এরা সরাসরি নিচের দিকে না পড়ে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অনেকটা গ্লাইডার এর মত এরা একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছে উড়ে যায়।


বিজ্ঞানিরা সাপের উড়ার ছবি এবং ভিডিও ধারন করেছেন। তারা গবেষনা করেছেন সাপ কিভাবে এই কাজটি করে থাকে। ‘আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি’ লং বিচে হওয়া এক মিটিং এ বিশ্লেষন করার চেস্টা করেছেন সাপের উড়ার পদ্ধতিটি। তাদের মতে, উড়ার সময় সাপ তাদের ওজন কমিয়ে ফেলছে না বা অসম্ভব কিছুও করছে না। এধরনের সাপগুলো শরীরের আকৃতি অনেকটা ভোঁতা যা উর্ধমূখী বাতাসের দ্বারা কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর সাপের আকৃতি অনেকটা এরো ডায়নামিক অর্থাৎ দ্রুতগতিতে সামনের দিকে যাওয়ার সময় বাতাসের দ্বারা খুব একটা বাধাপ্রাপ্ত হয় না। চিতা কিভাবে দ্রুত দৌড়াতে পারে এই সম্পর্কিত একটি পোস্টে এরো ডায়নামিক শেপ নিয়ে লেখা হয়েছে। এধরনের সাপগুলো একটু বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। উড়ার পূর্বে এরা শরীরকে বিশেষ একটি আকৃতিতে নিয়ে আসে এবং তীব্র বেগে সামনের দিকে ছুঁড়ে দেয়। এরপর শরীরকে আগ-পিছ করে বাতাসের সাথে একটি সামঞ্জস্যতা তৈরি করে নেয় যা এটিকে অনেকটা সামনের দিকে নিয়ে যায়।

একদল বায়োলজিস্ট উড়ন্ত সাপকে ৪৯ ফিট উঁচু টাওয়ার থেকে ছেড়ে দেয়া এবং এর উড়ার দৃশ্যটি ভাল মানের ক্যামেরায় ধারন করা হয়। এরপর সেই ভিডিও বিশ্লেষন করে তারা বিভিন্ন তথ্য বের করেন। সাপের উড়ার এই পদ্ধতির উপর নির্ভর করে বিশেষ ধরনের আকাশযান তৈরির কথাও তারা ভাবছেন যেটি কম জ্বালানি খরচ করবে।


জোনাকী পোকার আলোর রহস্য

রচনা - কামরুল আলম



শহরে যারা থাকেন, তাদের কথা তো জানিনা- কিন্তু গ্রামাঞ্চলের দিকে যারা থাকেন বা কোন এক সময় থেকেছেন তাদের জোনাকী দেখার কথা। আমার যতদূর মন পড়ে, বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের দিকে সন্ধ্যায় গ্রামে জোনাকি উড়তে দেখেছি। টিমটিমে আলোর অপূর্ব শোভা দেখিয়ে তাদের এদিকওদিকে ঘুরে বেড়ানো রাতে প্রকৃতিতে অনন্য দৃশ্যের অবতারণা করে। খুব কাছ থেকে না দেখলে এদের এই আলো সবার কাছে একটা রহস্যই থেকে যায়।

যারা দেখেছেন তাদের মনে কি আদৌ প্রশ্ন জাগেনি যে- এই স্বয়ংপ্রভ নীলাভ-সবুজ দ্যুতির সত্যিকারের রহস্য কি? আসে কোত্থেকে এই আলো ?

আজ ভাবলাম, এই বিষয়ে একটা নিবন্ধ লিখব। তাই উইকিপিডিয়া আর গুগলে লাঙল নামিয়ে দিলাম।

খুব কাছ থেকে তোলা ছবিতে দেখলে বুঝতে পারবেন এই রহস্যের উৎপত্তি সম্পর্কে। দেখা যায় যে, এই পতঙ্গটির তলপেটের দিক থেকে এই আলোর উৎপত্তি। বাস্তবিকই তাই। জোনাকির বা Lampyris noctiluca এর তলপেটের শেষের দিকে আলাদা একটি উপাঙ্গ আছে, যেখান থেকে এই আলোর উৎপত্তি হয়। এই প্রত্যঙ্গ হতে লুসিফেরিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত হয় যা জোনাকির শ্বাসনালী দ্বারা গৃহীত অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়। এই জারণ বা অক্সিডেশনে লুসিফারেজ নামক জৈবঅনুঘটক বা এনজাইম সহায়তা করে। জারণ বিক্রিয়াটিতে যে পরিমাণ শক্তি বা আলো উৎপন্ন হয়, তার মাত্র ২% হল তাপ। তাই এই আলো এতটা স্নিগ্ধ মনে হয়। ঐ বিশেষ অঙ্গটির স্নায়ু দ্বারা এই আলোর স্থায়িত্ব নিয়ন্ত্রিত হয়।

এই আলো তারা ব্যবহার করে তাদের বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করতে। স্ত্রী প্রজাতির জোনাকিরা এই আলো দিয়ে পুরুষ জোনাকিকে আকর্ষণ করে, ডিম পাড়ে এবং মারা যায়। নিষেকের পর লার্ভা দশায় অনেকদিন অবস্থান করতে হয় তাদের। তবে এই আকর্ষণের ব্যাপারটা প্রজাতিভেদে ভিন্ন। যেমন, আমেরিকায় এক প্রকারের জোনাকি আছে, যাদের পুরুষ প্রজাতি পাঁচ সেকেন্ড অন্তর জ্বলে উঠে, আর এর প্রতিক্রিয়ায় মাটিতে অপেক্ষমান স্ত্রী জোনাকি দুই সেকেন্ড পর পর জ্বলে উঠে। এভাবে তারা মিলন সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদান করে।

**এই সম্পর্কে ইন্টারনেটে আপনি ছবি দেখতে চাইলে Google Image Search এ গিয়ে Lampyris noctiluca লিখে Search দিন।

তথ্যসূত্র:

* en.wikipedia.org
* How Things Work- Webpage