রবিবার, ২৬ মে, ২০১৩

বাসায় হীরা প্রস্তুতি এবং এর রসায়ন

রচনা - কামরুল আলম

বাসায় হীরা প্রস্তুতি এবং এর রসায়ন




হীরা আর কিছুই নয় কার্বনের একটি রূপ মাত্র। গ্রাফাইট আর হীরার মধ্যে মূল পার্থক্য কার্বন কার্বন বন্ধনে। বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে ক্রিত্তিম হীরা প্রস্তুত করা হয়। শিল্পক্ষেত্রে এর ব্যপক ব্যবহার রয়েছে। ডাঃ হল সবপ্রথম ক্রিত্তিম হীরা প্রস্তুত করেছিলেন। তবে ব্যপক চাহিদার কারনে এখন আর হলের প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় না। বানিজ্যিক ভাবে হীরা প্রস্তুত করার জন্যে হলের প্রক্রিয়া এখন অকার্যকর।
এখন আমরা দেখব কিভাবে বাসায় হীরা প্রস্তুত করা যায়। এ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত হীরার আকার অত্যন্ত ক্ষুদ্র। বানিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী।

যা যা লাগবেঃ


১. একটি ভালো মাইক্রোওয়েব ওভেন
২. কফি মগ ( ২ টি)
৩. ৩ মি. মি. গ্রাফাইট পেন্সিল ( ৩ টি)
৪. সামান্য অলিভ অয়েল। ( কয়েক ফোঁটা)
৫. ১০০% সুতির সুতা
এগুলোর মধ্যে ১০০% সুতির সুতা খুজে পাওয়া একটু কষ্টকর হবে।
কাজ-০১ঃ


এই পদ্ধতিতে মাইক্রোওয়েব ব্যবহার করা হয় গ্রাফাইটকে তাপ দিয়ে প্লাজমা অবস্থায় নেয়ার জন্যে। আর অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয় গ্রাফাইট যাতে পুড়ে না যায় [ বেশি তাপে গ্রাফাইট বাতাসের (অক্সিজেন) সাথে বিক্রিয়া করে পুড়ে (আগুন ধরে ) যায়]এছাড়া গ্রাফাইট পেন্সিলে যে বাইন্ডার ( আঠালো পদার্থ ) থাকে তা আলাদা করতে অলিভ অয়েলের ভুমিকা ব্যাপক।
কয়েক ফোঁটা তেল একটি প্লেটে নিতে হবে। তারপর তেলের মধ্যে ভালভাবে সুতা ভিজিয়ে নিতে হবে। সুতা কিছু তেল শোষণ করে নিবে।
কাজ-০২ঃ

এবার সুতা নিয়ে সুতায় একটা গিত্তু দিন। গ্রাফাইটের টুকরো টিকে এবার গিত্তুর ভিতরে দিয়ে দিন। খুব সাবধানে সুতার দুই প্রান্ত টেনে গিত্তু শক্ত করুন। এবার দুইপাশে দুটি টুট পিক ( কাঠি) দিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন।

কাজ-০৩ঃ





মাইক্রোওয়েব এর ভিতরটা ভালো করে পরিস্কার করে নিন।


কাজ-০৪ঃ






খুব ই সাবধানে গিত্তু খুলে নিন। গিত্তু খোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে এটি যাতে এদিক সেদিক নড়ে না যায়। একটি ক্ষুদ্র জায়গায় তেল যাতে সীমাবদ্ধ থাকে।

কাজ-০৫ঃ




এবার কফি মগের পিছন দিকে চিত্রের মত করে গ্রাফাইট বসিয়ে নিন। সমান্তরাল যে দুটি গ্রাফাইট টুকরো রয়েছে তাদের মধ্যে কিন্তু কোন তেল লাগানো হয়নি।






বড় মগটি নিচে এবং ছোট মগটি উপরে রাখবেন। পুরো সিস্টেম  টি ক্রুসিবলের ন্যায় কাজ করবে।

কাজ-৬ঃ


এবার এই বানান ক্রুচিবলতি মাইক্রোওয়েবে রাখুন। জায়গা না হলে মাইক্রোওয়েবের গ্লাস ত্রে টি সরিয়ে রাখতে পারেন।


কাজ-৭ঃ



মাইক্রোওয়েবে সর্বচ্ছ সময় সেট করে দিন। কাজ শেষে মগ ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সব কিছু ঠিক থাকলে এর ভিতরে আপনি ১২০০ ডিগ্রীর বেশি তাপমাত্রা তুলতে পারবেন।
কাজ-৮ঃ




এবার আপনার উৎপাদনটি দেখুন।








রসায়ন কি বলেঃ
এই প্রক্রিয়ায় ডায়মন্ড উৎপাদন কখনই সম্ভব নয়। কেন? কারন
১. আমরা যে পেন্সিল ব্যবহার করি গ্রাফাইট ছাড়া অন্য কাদা জাতিয় দ্রব্য থাকে।
২. কার্বন রি-ক্রিস্তালাইজ করার জন্যে প্রয়োজনীয় তাপ সরবরাহ করার ক্ষমতা মাইক্রোওয়েবের নেই।
৩. তেল ব্যবহার করে এই তাপমাত্রায় পোঁছানো গেলেও প্রয়োজনীয় চাপ পাওয়া যাবে না। ডায়মন্ড তৈরিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০০০০ গুন বেশি চাপ দরকার।
৪. কেউ কাউ দাবি করতে পারেন যে সিলিকন কার্বাইড বা জিরকনিয়াম অক্সাইড এর মত তাপ শোষণ কারি পদার্থ ব্যবহার করে এটি করা যেতে পারে, কিন্তু প্রয়োজনীয় চাপ পাবেন কোথায়?
৫. এটি সত্য যে ছোট ক্রিস্তাল তৈরিতে বেশি চাপের দরকার নেই কিন্তু ছোট ক্রিস্তালের কোন বাজার মুল্য নেই।
৬. এটি সত্য যে ডায়মন্ড গ্রাফাইটের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল , তাই গ্রাফাইট সবসময়েই স্থিতিশীল অবস্থায় যেতে চাইবে। মাইক্রোওয়েব এই প্রক্রিয়ার জন্যে ভালো হতে পারে কারন এটি সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
৭. খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েবের ব্যবহার এখনও গবেষণাধীন। কারন মাইক্রোওয়েব আমিষ কে মিউট্যান্ট করে ফেলে যা ক্যান্সার এর জন্যে দায়ী।
সতর্কতা ঃ
লেখাটি শুধু আপনাকে আনন্দ দেওয়ার জন্যে, দয়াকরে বাসায় ট্রাই করবেন না। 

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

লেবুর শক্তি ও লেবু প্রেম

রচনা - কামরুল আলম


সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্যের মধ্যে লেবু অন্যতম। লেবুর রয়েছে অনেক উপকারি শক্তি। খুব অল্প লোকের ই লেবুর প্রতি এলারজি আছে। এদের মধ্যে আপনি নেই তো??? লেবুর প্রতি বিরক্ত থাকলে এর উপকারিতা গুলো থেকে আপনাকে বঞ্ছিত হতে হবে।

তো জেনে নেই এর শক্তি গুলো কি কি
১. অনেক লোক ই দেখেন প্রতিদিন। এদের মধ্যে অনেকের বয়েস বুঝার উপায় থাকে না। মনে হয় বাচ্চা। কিন্তু আলোচনা করতে করতে বুঝবেন যে তারা বাচ্চা নয়। ধাড়ি বুড়ো, কিন্তু চেহারা দেখে বুঝা না। আবার অনেক বাচ্চা গুলো দেখা যায় বুড়োর মত। তাই বয়সের ছাপ লুকতে লেবু খান। লেবু আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।

২. স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যে, তার নাম লেবু।
৩. এটি রক্তচাপ ( ব্লাড পেসার) কমায় আর রক্তে এইচ ডি এল ( ভালো কলেস্তরল) বাড়ায়।
৪. লেবু কোলন, প্রোস্টেট এবং ব্রেস্ত ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে। কোষের উল্টাপাল্টা পরিপাকে বাধা দেয়, যেটি মূলত ক্যান্সার এর জন্যে দায়ী। এটি কোষের নাইট্রোসো এমিন প্রস্তুতিতে বাধা দেয়।
৫. সংক্রমনের বিরুদ্ধে লেবু কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এটি রক্তের শ্বেতকনিকা বৃদ্ধি করে যা জীবাণু ধ্বংস করে। এছাড়া এন্টিবডি উৎপাদনে সহায়তা করে।

৬. সামান্য গরম পানিতে একটু লেবুর রস, কি যে উপকারি!!! পরিপাক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে আর লিভারকে রাখে সতেজ। গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় কার্যকর।
৭. লেবুর খোসা শুকিয়ে গুড়ো করে রাখতে পারেন। আর ব্যবহার করতে পারেন গোসল করার সময়। শরীরকে করবে ঠাণ্ডা , আর আরাম অনুভব করবেন ব্যাপক। এছাড়া এ গুড়ো মাথাব্যথা দূর করবে।
৮. ব্রণে লেবুর রস দিলে ব্রণ দূরীভূত হবে আর নতুন ব্রণ উঠতে বাধা প্রধান করবে।
৯. লেবু হচ্ছে প্রাকৃতিক ত্বক পরিস্কারকারি । এটি ত্বক কালো হওয়ার জন্যে দায়ী মেলানিন কমায় এবং মেলানিন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই আপনার ত্বক থাকবে সজীব আর উজ্জ্বল।
১০. সাধারন ঠাণ্ডা প্রতিরোধে এটি অনেক কার্যকর।

১১. মূত্রনালির প্রদাহ এবং গনেরিয়া প্রতিরোধে লেবুর শক্তি অনেক।
১২. কিছু কিছু পোকামাকড়ের কামরের ব্যাথা ও বিষ মুক্ত করতে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।
১৩. সামুদ্রিক খাবার ও মাংসে জীবাণু দূর করতে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।
১৪. যারা মোটা তারা প্রতিদিন সকালে লেবুর রসের সাথে একটু লবণ মিশিয়ে খেয়েই দেখুন না !!! এটি আপনার কলেস্তরল লেভেল এবং ওজোন দুটোই কমিয়ে ফেলবে।
১৫. ডায়রিয়া হলে লেবুর শরবত ডি- হাইদ্রেশান রোধ করে।
১৬. এক চামচ ঘন লেবুর রস প্রতিদিন খেলে এজমা দূর হয়ে যাবে।
১৭. ঝরঝরা ভাত খেতে চাচ্ছেন, তো ভাত সিদ্ধ হয়ে আসার সময় একটু লেবুর রস দিয়ে দিন না।
১৮. সাইট্রিক এসিড বানিজ্যিক ভাবে লেবুর রস থেকেই সংগ্রহ করা হয় যা বিভিন্ন জুস এবং কোমল পানিয় তে ব্যবহার করা হয়।
১৯. এছাড়া থালা বাসন ও হাড়ি পাতিল পরিস্কারে এর ব্যবহার ব্যপক জনপ্রিয়।
২০. টেলার এবং ক্যাশিয়াররা টাকা গুনার সময় দুই আঙ্গুলে লেবুর রস ব্যবহার করে থাকেন। মূলত এটি জীবাণু দূর করে হাতের কোন ক্ষতি না করেই।
২১. বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে লেবুর রস ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও এর ক্ষমতা অনেক কম শুধু ছোট ডিজিটাল ঘড়িতে লেমন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়।
২২. দুর্বল জৈব এসিড হিসেবে কিছু কিছু কাজে রসায়ন ল্যাবে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।

আসলে লেবুর ভিতরে কি আছে যে এটি এত কাজ করতে পারে?? চলুন জেনে নেয়া যাক লেবুর ভিতরে কোন রসায়ন ( ক্যামিকেল) লুকায়িত আছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে যা থাকে
শক্তি                                   ১২১ কিলোজুল ( ২৯ কিলক্যালরি)
শর্করা                                  ৯.৩২ গ্রাম
চিনি                                   ২.৫ গ্রাম
আশ                                   ২.৮ গ্রাম
ফ্যাট বা চর্বি                          ০.৩ গ্রাম
আমিষ                                 ১.১ গ্রাম
ভিটামিন বি-১ ( থায়মিন)           ০.০৪ মি. গ্রাম ( ৩ %)
ভিটামিন বি-২ ( রাইবোফ্ল্যাভিন)     ০.০২ মি. গ্রাম ( ২ %)

ভিটামিন বি-৩( নিয়াচিন)             ০.১  মি. গ্রাম ( ১ %)
ভিটামিন বি-৫ ( পেন্থথেনিক এসিড) ০.১৯ মি. গ্রাম ( ৪ %)
ভিটামিন বি-৬                          ০.০৮ মি. গ্রাম ( ৬ %)
ভিটামিন বি-৯                          ১১ মাইক্রো গ্রাম ( ৩ %)
ক্লোরিন                                  ৫.১ মি. গ্রাম ( ১ %)
ভিটামিন সি                             ৫৩ মি. গ্রাম ( ৬৪ %)
ক্যালসিয়াম                             ২৬ মি. গ্রাম ( ৩ %)
আয়রন                                  ০.৬ মি. গ্রাম ( ৫ %)
ম্যাগনেসিয়াম                           ৮ মি. গ্রাম ( ২ %)
ম্যাংগানিজ                              ০.০৩ মি. গ্রাম ( ১ %)
ফসফরাস                               ১৬ মি. গ্রাম ( ২ %)
পটাশিয়াম                               ১৩৮ মি. গ্রাম ( ৩ %)
জিঙ্ক                                     ০.০৬   মি. গ্রাম ( ১ %)


তো প্রতিবেলায় লেবু খান। লেবুকে ভালবাসুন।