রচনা - কামরুল আলম
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের
মধ্যে মোমবাতি অন্যতম। অল্প খরচের মধ্যে আলো পেতে মোমবাতি খুবই উপকারি
পণ্য। কাঁচামাল হিসেবে প্যারাফিন ব্যবহার করে খুব সহজে মোমবাতি তৈরি করা
যায়। বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় সময়ে আলো দানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, এমনকি শো পিস হিসেবেও
নানা রঙ ও আকৃতির মোমবাতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
একজন বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থানের জন্য মোমবাতি
তৈরির ব্যবসা শুরু
করতে পারেন।
ছবি: মোমবাতি
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর,ঢাকা।
গ্রাম বা শহর সব জায়গার মানুষ মোমবাতির
ব্যবহার করে। মোমবাতি তৈরি করে নিজ এলাকা বা এলাকার বাইরে মুদি দোকান
গুলোতে পাইকারী দরে বিক্রি করা যেতে পারে। সাধারণত বিভিন্ন আকৃতির নকশা
করা নানা রঙের মোমবাতির চাহিদা মূলত: শহরেই বেশি দেখা যায়। এ জাতীয় মোমবাতি
শহরের সৌখিন পণ্য বিক্রির দোকানে সরবরাহ করা যেতে পারে।
ছবি: মোমবাতি প্যাকেটজাতকরণ
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর,ঢাকা।
|
আনুমানিক ৭৫০০-৮০০০ টাকার স্থায়ী উপকরণ
এবং ৮০০-১০০০ টাকার কাঁচামাল কিনে মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন নিজের কাছে না থাকলে স্থানীয় ঋণদানকারী
ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) থেকে শর্ত সাপেক্ষে
স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের
জন্য মোমবাতি তৈরীতে অভিজ্ঞ এমন কোন ব্যক্তি,
স্থানীয় ক্ষুদ্র ও
কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক),
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের
উদ্যোগে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
স্থায়ী উপকরণ
|
ছবি: মোমবাতি বানানোর ডাইস
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
|
তথ্যসূত্র :
মাঠকর্ম,
কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা। |
মোমবাতি তৈরির নিয়ম
প্রথম ধাপ
মোম তৈরির ডাইস বা ছাঁচের দুটি অংশ একটি
ছিঁটকিনি দিয়ে আটাকানো থাকে। এবং ডাইসের ভিতরে মোমবাতি আকৃতির কতগুলো খাঁজ
থাকে। প্রথমে ডাইসের ছিটকিনি খুলে ছাঁচের দুইটি অংশ আলাদা করতে হবে। এরপর
একটি কাপড়ে তেল নিয়ে ডাইসের ভিতরে থাকা খাঁজগুলো ভালো ভাবে মুছে নিতে হবে, যাতে করে মোমগুলো
খুব সহজে বের করা যায়।
দ্বিতীয় ধাপ
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
তৃতীয় ধাপ
এরপর ছাঁচের ২টি অংশ এক সাথে আটঁকে দিতে
হবে এবং ছাঁচের সাথে লাগানো পানির ট্যাংকে পানি ভরতে হবে। কারণ পানি ভরা
থাকলে গরম মোম ঠান্ডা হতে সহজ হয়।
চতুর্থ ধাপ
এবার চুলায় কড়াই বসাতে হবে। কড়াই গরম হলে
তার মধ্যে সাদা শক্ত মোম (প্যারাফিন) দিতে হবে। মোম পুরোপুরি গলে যাবার আগেই
কড়াইতে ১০ ভাগ মোমের সাথে ১ ভাগ স্টিয়ারিক এসিড মিশাতে হবে।
পঞ্চম ধাপ
প্যারাফিন গলে যাবার পর বেশিক্ষণ
চুলায় রাখা যাবে না। কারণ গলে যাওয়া প্যারাফিন বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে।
ষষ্ঠ ধাপ
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা
সপ্তম ধাপ
মোম ঢালার খাঁজটি যতক্ষণ না পুরোপুরিভাবে
ভরবে ততক্ষণ পর্যন্ত মোম ঢালতে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে
হবে যে, মোম
ঢালার সময় খাঁজের ভেতরে যেন কোন ফাঁকা থেকে না যায়।
অষ্টম ধাপ
২০/২৫ মিনিট পর মোমগুলো ঠান্ডা হলে
ছাঁচের ২টি অংশ আলাদা করে মোমগুলো বের করে আনতে হবে।
নবম ধাপ
এবার মোমের সলতের বাড়তি অংশগুলো সাইজ মত
কাটতে হবে এবং মোমবাতি ভালোভাবে বসানোর জন্য নিচের অংশের তলাটি সমান করে কাটতে
হবে। বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা মোম তৈরির জন্য সেই অনুযায়ী ছাঁচ তৈরি করতে
হয়।
ছবি তোলার স্থান: কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা। |
- সাবধানতা
মোমবাতি তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে
সর্তক থাকতে হবে-
- স্টিয়ারিক এসিড মোমের সাথে মেশানোর সময় সাবধান থাকতে হবে।
- মোমে যদি আগুন ধরে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে চুলা নিভিয়ে ঢাকনা দিয়ে কড়াই ঢেকে দিতে হবে।
- চুলার উপর কড়াই থাকা অবস্থায় রং মেশানো যাবে না, চুলা থেকে নামিয়ে রং মেশাতে হবে।
- মোম তৈরির কাচামাল থেকে ও তৈরির সময় শিশুদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
- কাজ শেষে মোমের ছাঁচটি পরিস্কার করে রাখলে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- খরচ
স্থায়ী যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ
|
৪-৫ টাকা
|
কাঁচামাল বাবদ
|
৬৯০-৭৭৪ টাকা
|
জ্বালানী
|
৪৫-৫০ টাকা
|
মোট=৭৩৯-৮২৯ টাকা
|
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।
- আয়
উপরের উপকরণ দিয়ে ২৫০টি মোমবাতি তৈরি
করা সম্ভব।
১টি মোমবাতি বিক্রিতে আয়=৫-৬ টাকা।
২৫০টি মোমবাতি বিক্রিতে আয়=১২৫০-১৫০০
টাকা।
|
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।
- লাভ
২৫০টি মোমবাতি বিক্রিতে
আয়
|
১২৫০-১৫০০ টাকা।
|
২৫০টি মোমবাতি তৈরিতে খরচ
|
৭৩৯-৮২৯ টাকা
|
লাভ=৫১১-৬৭১ টাকা
অর্থাৎ ৫১১-৬৭১ টাকা লাভ করা সম্ভব।
তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি
লাভ হতে পারে।
|
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।
স্থায়ী উপকরণগুলো একবার কিনলে অনেকদিন ধরে
কাজ করা যাবে। ব্যবসার শুরুতেই এ খরচটি করতে পারলে পরবর্তীতে শুধু কাঁচামাল
কিনে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন ১ : মোমবাতি
ব্যবসার বাজার কেমন ?
উত্তর : গ্রাম বা শহর সব জায়গাতেই
মোমবাতির চাহিদা রয়েছে।
প্রশ্ন ২ : মোমবাতি
তৈরির ব্যবসা করতে কি পরিমাণ মূলধন লাগে ?
উত্তর : আনুমানিক ৮০০০ টাকার স্থায়ী
উপকরণ এবং ১০০০ টাকার কাঁচামাল কিনে মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৩ : মোমবাতি
তৈরি শিখতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কি না ?
উত্তর : প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ
গ্রহণের জন্য মোম তৈরীতে অভিজ্ঞ এমন কোন ব্যক্তি,
স্থানীয়
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর
ও বিভিন্ন বেসরকারী
প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে
পারে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের, নজরুল ইসলামের নিকট
থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে মোমবাতি তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার
নেয়া হয়েছে। এছাড়া মোমবাতি তৈরির ব্যবসা কনটেন্ট লেখার জন্য নিচের
বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে।
- ঘোষ, স্বপন কুমার; ১৯৯৩; গ্রামীণ কুটির শিল্প, দে’জ পাবলিশিং; কলকাতা-৭০০০০৭৩।
- ইব্রাহীম, মোহাম্মদ; ১৯৯৯; মোমবাতি তৈরী সাবান তৈরি: গ্রামীণ প্রযুক্তি সিরিজ-১, বিজ্ঞান গণশিক্ষা কেন্দ্র; ঢাকা।
- বাবু, মুস্তাগিসুর রহমান ও বাদল, আলম জহিরূল, ২০০১; মোমবাতি; ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন; ঢাকা।