শনিবার, ২৮ মে, ২০১১

তীরের মতোই সোজা পথে চলে তিমি

রচনা - কামরুল আলম

 তিমি মাছের বেশ কিছু মজার মজার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সাম্প্রতিক আরেকটি জিনিস জানা গেছে তা হলো তারা হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে একদম সোজাসুজিভাবে। অনেকটা কম্পাসের মতো একটা সুনিদিষ্ট পথ অতিক্রমের মতো বা তার চেয়েও সূক্ষ কিছু একটা।


অনেকে বিশ্বাস করে অনেক প্রানীর ভেতরেই কম্পাস আছে এবং তারা নির্দিষ্ট দিক সম্পর্কে অবগত থাকে যার মাধ্যমে সু-নির্দিষ্ট পথ খুজে পেতে পারে।

সাধারনতঃ জেলেরা সূর্যকে অনুসরণ করে পথ চলে। অনেক পাখিই হাজার হাজার মাইল পারি দিয়ে আসে এবং সঠিকভাবেই তাদের নিজ আবাস্থলে ফিরে যেতে সমর্থ হয়। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো সেইসব রহস্যের মৌলিক কোন কারন খুজে বের করতে পারে নাই।

University of Canterbury ‘র বিজ্ঞানী হর্টন এবং তার সহকর্মীরা ১৬ টি তিমির একটি দলকে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা মূলতঃ ভূ-উপগ্রহ ট্র্যাকিং টেকনোলজী ব্যবহার করে এবং তিমিদের অনুসরণ করতে থাকে।

ব্রাজিরের পশ্চিম প্রান্ত থেকে তারা তিমি মাছগুলোকে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন এবং তিমিগুলো ৬০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এন্টারর্টিকের পানিতে পৌছায়। তিমিগুলো ১০০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার পথ পর্যন্ত সোজা ভাবে চলেছে।

হর্টন জানান, তাদের চলার পথে কখনো ১ ডিগ্রীও বাঁক দেখা যায় নি।বর্তমান বিশ্বের সেরা টেকনোলজীর বিমান বা জাহাজ দিয়েও এমন সোজা পথ অতিক্রম করা বেশ কঠিন বেপার। বিশেষ করে সমুদ্রের ঢেউ, সূর্যের অবস্থান এবং কম্পাসের চলাফেরা সবই বেশ আপেক্ষিক।

রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

রচনা - কামরুল আলম


বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের গা ছমছম করা সেই গল্পগুলো কি মনে পড়ে আপনাদের? বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখা গল্পগুলো বরাবরই জনপ্রিয়। তবে এটা জানেন কি? উত্তর -পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ভয়ানক রহস্যময় সেই বারমূডা ট্রায়াঙ্গল এর রহস্যভেদ করা হয়েছে? অবশ্য এর রহস্যভেদ করা হয়েছে অনেক আগেই, সেই ১৯৭৫ সালে!


(মানচিত্রে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল)

যারা এখনো বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সমন্ধে জানেননা তাঁদের জন্যে বলছি-

ক্যারিবীয় সমুদ্রে এর অবস্থান। ত্রিভূজাকৃতির এই জায়গাটাকে ঘিরে তৈরী হয়েছে অজস্র গল্প। রহস্যজনক কোনো কারণে এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় জাহাজ আর উড়োজাহাজ নিখোঁজ হয়ে যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো নিখোঁজই থেকে যায়। এই বারমূডা ট্রায়াঙ্গলকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য গল্প, নির্মিত হয়েছে প্রামান্যচিত্র এমনকি চলচ্চিত্রও! বারমুডা ত্রিভূজের তিন প্রান্তের এক প্রান্ত ছুঁয়েছে বারমুডায়, এক প্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামি এবং আরেকটি প্রান্ত স্পর্শ করেছে পুয়োর্তরিকোর সাজ জুয়ান।

১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এক প্রবন্ধে সাংবাদিক ই ভি ডাবলিউ জোনস প্রথম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অস্বাভাবিক ঘটনার কথা লিখে একে নজরে আনেন। ১৯৫২ সালে ‘ফেট’ ম্যাগাজিন-এর জর্জ এক্স সান্ড লিখেন “সি মিসট্রি অ্যাট আওয়ার ব্যাক ডোর”। জর্জ এক্স সান্ড ৫ জন ইউএস নেভি সহ ১৯ নং ফ্লাইটের নিখোঁজ সংবাদ ছাপেন। শুরু হয় বারমূডা রহস্য!

(এই সেই জ্ঞানী বই)

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভারসিটির গ্রন্থাগারিক লরেন্স ডেভিড কাসচি ১৯৭৫ সালে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য ভেদ করেছেন দাবী করেন! “দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মিসট্রি : সলভড” নামের বইটি প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন তিনি। কাসচি বলেন আসলে বারমূডা ট্রায়াঙ্গলকে নিয়ে অতিরঞ্জিত গল্প ছড়ানো হয়েছে, এটাকে ’মিসটিফাই’ করা হয়েছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে গায়েব হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তিনি যুক্তি দেখান-

১) বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে নিরুদ্দিষ্ট জাহাজ ও উড়োজাহাজের সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার চেয়ে তুলনামূলকভাবে খুব বেশি নয়।

২) সমুদ্রের ওই বিশেষ জলসীমায় প্রায়ই ট্রপিক্যাল ঝড় ভয়ঙ্কর রুপ নেয়, কাজেই ঝড়ের ঘূর্ণিপাকে জলযান নিঁখোজ হওয়াটা কি রহস্যময় ? সাংবাদিক ই ভি ডাবলিউ জোনস, জর্জ এক্স সান্ড প্রমূখ যারা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ঘিরে রহস্য ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা ঝড়ের ব্যাপারটা কৌশলে এড়িয়ে গেছে।

৩) বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে গায়েব হয়ে যাওয়া জাহাজ/উড়োজাহাজ সংখ্যা যত না বেশি- তার চেয়ে বেশি দাবী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি জাহাজ নিখোঁজ হলে সিরিয়াসলি রিপোর্ট করা হয়েছে কিন্ত ফিরে এলে সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চুপ থেকেছে।

৪) কোনও কোনও সময়ে নিরুদ্দেশের ঘটনাই ঘটেনি। বলা হয়েছে ১৯৩৭ সালে একটি প্লেন ক্র্যাশ করেছে। আসলে অমন কিছুই ঘটেনি।

৫) আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য হল ‘প্রস্তুতকৃত রহস্য’ বা ‘ম্যানুফাকচারড মিসট্রি ‘ যা লেখকরা ভুল ধারণার ওপর জিইয়ে রেখেছেন, এর পিছনে কাজ করেছে মিথ্যে যুক্তি আর রগরগে কাহিনী ছড়ানোর বাতিক।


(বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র)

তা যা-ই হোক, সাংবাদিক সাহেবের এতো যুক্তি কিন্ত মানুষের মন থেকে রহস্যের গন্ধ্ দূর করতে পারেনি। যুক্তিতে কি সব হয়? আমরাতো জানি ‘ভূত’ বলে কিছু নেই, তবু কি আমরা ভূত তাড়াতে পেরেছি?